১৬ ডিসেম্বর জাতির অহংকার, আনন্দ আর বেদনার এক মহাকাব্যিক দিন : তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (১৬ ডিসেম্বর) : বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে দেশি-বিদেশি অপশক্তি তখনো যেমন সক্রিয় ছিল, এখনো তেমনি সক্রিয় আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মহান বিজয় দিবসকে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল দিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যতদিন বাংলাদেশ থাকবে কখনোই এই দিবসের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য মলিন হবে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ষড়যন্ত্রকারীদের রঙ-রূপ-চেহারা হয়তো পাল্টেছে, চরিত্র কিন্তু পাল্টায়নি। বিষয়টি আমাদের সবার স্মরণে রাখা দরকার।

সংসদের নির্বাচনি মিছিলে সশরীরে উপস্থিত থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-নগরে, বন্দরে-বাজারে, মহল্লায় অলিতে গলিতে-রাজপথে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার নির্বাচনি মিছিলে আমিও সঙ্গে থাকব।’

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘কারণে-অকারণ শর্তের পর শর্ত জুড়ে দিয়ে কিংবা নানা অজুহাতে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী একাধিক চক্র নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে বারবার বিঘ্ন সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখনো চলছে ক্ষেত্র বিশেষে। সব রকম বাধা উপেক্ষা করে নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণা করেছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো থেমে নেই। গণতন্ত্রের পক্ষের সাহসী সন্তান ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনা, সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ। কি ছিল ওসমান হাদির অপরাধ? আমি মনে করি, কয়েকটি প্রশ্নের জবাবের মধ্যেই গণতন্ত্রকামী জনগণের সামনে ঘাতকদের চরিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করা গেলে কারা খুশি হবে এমন প্রশ্ন রেখে তারেক রহমান বলেন, ‘দেশে জনগণের ভোটে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে কাদের লাভ? আমি বিশ্বাস করি, এসব প্রশ্নের জবাবের মধ্যেই হাদির ঘাতকরা লুকিয়ে রয়েছে। স্বাধীনতাপ্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগণের শত্রুরা ঘাপটি মেরে রয়েছে।’

বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমি বিজয় দিবসের গৌরবজনক সময়ে দৃঢ়ভাবে বলে দিতে চাই, যারা স্বাধীনতাপ্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগণকে ভয় দেখাতে চায়, তারা অবশ্যই ব্যর্থ হবে। ভয়ের কোনো কারণ নেই, মানুষের জয় পরাজয়-জীবন মৃত্যু সবকিছুই আল্লাহর হাতে নির্ধারিত। সুতরাং আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে যদি আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার মিছিল নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকি, ষড়যন্ত্রকারীরা অবশ্যই পিছু হটতে বাধ্য হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭১, ২০২৪, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর, ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে প্রমাণিত হয়েছে, জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে জনতার বিজয় কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারে না।’

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কেবল ‘এক্সপেরিমেন্ট আর এক্সপেরিয়েন্স’ অর্জনের নির্বাচন নয় মন্তব্য করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘এবারের নির্বাচন অতীতের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ। এবারের নির্বাচনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বপ্ন-সাধ-আশা-আকাঙ্ক্ষা-স্বার্থ এবং সম্ভাবনা। নির্বাচনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের স্বার্থ
এবং সার্বভৌমত্ব সুসংহত রাখার প্রশ্ন।’

তারেক রহমান বলেন, ‘স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর ঘটনাবলি নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নিজের লেখা ‘একটি জাতির জন্ম’ শীর্ষক একটি নিবন্ধ রয়েছে। এই নিবন্ধটি আমাদের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অনন্য দলিল।’

এর আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, ‘১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ডাকে শুরু হওয়া স্বাধীনতাযুদ্ধ ওই বছর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয় পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করার মাধ্যমে। দেশের অদম্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে এ বিজয় ছিনিয়ে আনেন। তাই ১৬ ডিসেম্বর জাতির অহংকার, আনন্দ আর বেদনার এক মহাকাব্যিক দিন।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, মেজর
(অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সম্প্রতি হাদির ওপর আক্রমণকারীকে চিহ্নিত করা গেছে, সে আওয়ামী লীগের লোক। অথচ একটি পক্ষ হীন উদ্দেশ্যে এই ঘটনার জন্য বিএনপিকে চিহ্নিত করতে চায়। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘একটি গোষ্ঠী গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে চায়। আগামী নির্বাচন দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটিই নির্ধারণ করবে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে নাকি পিছিয়ে যাবে।’

মনোয়ারুল হক/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ