চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের ফেসবুক পেজে সাইবার হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসি নিউজ, (১২ অক্টোবর) : ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সরাসরি সম্প্রচারের সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের ফেসবুক পেজে সাইবার হামলা হয়েছে।

এ বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, আজ প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছিল। ঠিক সেই সময় আমাদের ফেসবুক পেজে সাইবার হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা পেজটি সাময়িকভাবে নিষ্ক্রিয় করে দেয়, যদিও পরে তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, যুক্তিতর্কে বহু তথ্যপ্রমাণসহ নিষ্ঠুরতার বিবরণ রয়েছে, যা গোটা বিশ্ববাসীর জানা অপরাধীরা চায় না। তাদের সহযোগীরাও তা চায় না। এ কারণেই আমাদের ফেসবুক পেজে সাইবার হামলা চালানো হয়েছে।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়েছে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আজ আইনি দিক ও বিগত ফ্যাসিস্ট শাসন আমলের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।

গত বুধবার মামলার শেষ (৫৪তম) সাক্ষী, তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের জেরা শেষ হলে আজকের দিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য নির্ধারিত হয়।

ঐতিহাসিক এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের পিতাসহ স্বজনহারা অনেক পরিবার। এছাড়া স্টার সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। সর্বমোট ৫৪ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন।

এই মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এস এইচ তামিম শুনানি করছেন। অন্যান্য প্রসিকিউটররাও শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন। পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন শুনানি করেন। গ্রেফতার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে শুনানি করছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একপর্যায়ে দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে চেয়ে আবেদন করেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, যা ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ করে। পরবর্তীতে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন।

এই মামলার বাইরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর একটি আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায়, অন্যটি রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছে।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, দলীয় ক্যাডার, প্রশাসনের অনুগত অংশ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে—এমন অভিযোগে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

সূত্র: বাসস

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ