ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও অমানবিক আচরণের অভিযোগ চাকরিচ্যুতদের
চট্টগ্রাম ব্যুরো, এবিসি নিউজ, (১১ অক্টোবর) : ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও অমানবিক আচরণের অভিযোগ তুলেছেন চাকরিচ্যুতরা।
শনিবার (১১ অক্টোবর) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ অভিযোগ করেন বরখাস্ত কর্মকর্তা এস এম এমদাদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সাড়ে চার হাজারের বেশি কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সবার ব্যাংক হিসাব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের অপরাধ কী? আমরা তো ব্যাংককে এগিয়ে নিয়েছি। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি চাকুরি হারিয়ে পুরো পরিবার এখন দিশেহারা। না পারছে কারও কাছে হাত পাততে, না পারছে কাউকে বোঝাতে। কারও মা অসুস্থ। কারও সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার যোগাড়।
সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী ব্যাংকের চাকুরি হারানো কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে বলেন, যদি বছরভিত্তিক ব্যাংকের পারফরমেন্স বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে দেখা যাবে আমরাই ব্যাংকটিকে গড়ে তুলেছি।
সংবাদ সম্মেলনে তারা ব্যাংকের ২০১৬ এবং ২০২৩ সালের আর্থিক রিপোর্ট পর্যালোচনা তুলে ধরে বলেন, ২০১৬ সালে মোট শাখা ছিল ৩১৮টি এবং ডিপোজিট ছিল ৬ লাখ ৮১ হাজার ৩৫২ মিলিয়ন টাকা। ইনভেস্টমেন্ট ছিল ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৭৪৮ মিলিয়ন টাকা। ইমপোর্ট ছিল ২ লাখ ৪৩ হাজার ৬৪৭ মিলিয়ন টাকা। এক্সপোর্ট ছিল ২ লাখ ৭৯ হাজার ৯৪০ মিলিয়ন টাকা। রেমিট্যান্স ছিল ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৯৫৪ মিলিয়ন টাকা। অপারেটিং প্রফিট ছিলো ৪ হাজার ৪৬৫ মিলিয়ন টাকা।
পক্ষান্তরে ২০২৩ সালে মোট শাখা ছিল ৩৯৪টি এবং উপশাখা ছিল ২৩৭টি, ডিপোজিট বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ লাখ ৩৪ হাজার ৫৬৬ মিলিয়ন টাকা। ইনভেস্টমেন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ লাখ ৮৮ হাজার ৩০৪ মিলিয়ন টাকা। ইমপোর্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯ মিলিয়ন টাকা। এক্সপোট বেড়ে দাঁড়ায় ৫ লাখ ৬৬ হাজার ১২২ মিলিয়ন টাকা। রেমিটেন্স বেড়ে দাঁড়ায় ৫ লাখ ৭৩ হাজার ৪১৬ মিলিয়ন টাকা, অপারেটিং প্রফিট বেড়ে দাঁড়ায় ২২ হাজার ৬১৪ মিলিয়ন টাকা।
এই তুলনামূলক ব্যাাখ্যা থেকেই বুঝা যায় আমাদের কর্মীবাহিনী তাদের পেশাগত দক্ষতার মাধ্যমে ব্যাংকের সামগ্রিক ব্যাবসার প্রসার ঘটিয়েছে। তারপরও ২০২৫ সালে এসে আঞ্চলিক বৈষম্যের স্বীকার হয়ে তারা আজ চাকুরিচ্যুত হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৩৩ বছরে ব্যাংকের সামগ্রিক ব্যাবসার যে প্রসার হয়েছিল তার তুলনায় ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৭ বছরে সব ক্যাটাগরিতে প্রায় ৩ গুণ ব্যাবসা প্রসারিত হয়। সুতরাং এতে প্রতীয়মান হয় যে আমাদের কর্মীবাহিনী সুদক্ষ ও অনেক কর্মঠ ছিল।
এ বিষয়ে তারা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
তাদের অভিযোগ, সফলতা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার পরও চট্টগ্রামের কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করেই পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
এস এম এমদাদুল ইসলাম জানান, ব্যাংক ব্যবস্থাপনা বা বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এখনো কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। আমরা ধৈর্য ধরেছি, কিন্তু আর পারছি না। আমরা ব্যাংক ধ্বংস করতে চাই না। বাঁচার জন্য রাস্তায় নামতে বাধ্য হবো।
আন্দোলনের সূত্রপাত
ঘটনার শুরু সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে। ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালের পর নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের ‘দক্ষতা যাচাই পরীক্ষা’ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তবে কর্মকর্তারা দাবি, এটা কোন যাচাই পরীক্ষা নয়। নতুন নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে আগের কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়ার ফাঁদ। তারা সেই ফাঁদে পা দেবে না। ৯০ শতাংশ কর্মকর্তা পরীক্ষা বর্জন করেন। এরপর থেকেই শুরু হয় বরখাস্ত ও টার্মিনেশনের নোটিশ।
সংবাদ সম্মেলনে আসা তানজিনা আফরোজ নামে চৌধুরীহাট শাখা হতে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু গিয়ে দেখি নোটিশে লেখা আছে – নিয়োগ পরীক্ষা। আমরা তো নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমেই এই চাকরি পেয়েছি, আবার কেন নিয়োগ পরীক্ষা দেব? তাই সবাই মিলে বর্জন করেছি।’