দীর্ঘদিন সুস্থ শরীর পেতে যে অভ্যাস জরুরি

লাইফস্টাইল ডেস্ক, এবিসি নিউজ, ঢাকা (৯ অক্টোবর) : সুস্থ মন আর সুস্থ শরীর—সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। আর সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে বেঁচে থাকতে হলে আপনাকে প্রতিদিন নিয়ম মেনে চলাফেরা করতে হবে। নিয়ম মেনে খাওয়াদাওয়া, নিয়ম মেনে ঘুমানো এবং নিয়ম মেনে ধ্যান ও মনঃসংযোগ করা জরুরি।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন সুস্থ শরীর পেতে হলে চাই ধৈর্য আর আত্মনিয়ন্ত্রণ। এ ক্ষেত্রে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে কিছু নিয়মিত অভ্যাস। যেমন হাঁটাচলা, ধ্যান ও মনঃসংযোগ, ভালো ঘুম, ভালো খাবারদাবার এবং পরিবেশ দূষণ থেকে বাঁচা।

১. হাঁটাচলা

আপনার কাছে ব্যায়াম সবসময় কঠিন বলেই মনে হয়। কারণ সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্যায়াম করবেন, না গোসল করবেন, না অফিসে বের হবেন। সবকিছু যেন এলোমেলো। বিরক্তিকর একটি অধ্যায়। তাই ব্যায়ামকে আপনি অনেক কঠিন কাজ হিসেবে দেখছেন। মনে হয় এ যেন ৩০ মিনিটের অত্যাচার।

এ বিষয়ে হার্ভার্ডের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ— ব্যায়ামকে আনন্দের সঙ্গে জীবনযাপনের অংশ করে নিন। শিডিউল করা ব্যায়ামের বাইরেও একটু বাড়তি কাজ করতে পারেন। আর এই বাড়তি কাজটুকু আবার খুব কঠিন কিছু নয়। হাঁটতে হাঁটতে কথা বলা, লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার, অফিসের বিরতিতে স্ট্রেচিং, অবসরে বাগান করা, খেলাধুলা অথবা নাচের অভ্যাস গড়ে তুলুন। মূলকথা হচ্ছে— আপনি নিয়মিত ব্যায়াম করলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা রক্তনালি, বিপাকীয় তন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। তাই লম্বা কাজের ফাঁকে হাঁটাচলা করতেই হবে।

২. ধ্যান ও মনঃসংযোগ

ধ্যান ও মনঃসংযোগ মানসিক চাপ কমিয়ে দেয়। কাজে মনোযোগ বাড়ায়। আর মানুষকে বর্তমানের সঙ্গে সংযুক্ত রাখতে সাহায্য করে। অনেকে প্রতিনিয়ত অতীত নিয়ে ভাবতে থাকেন, ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হন। আর এই মানসিক চাপ দেহের কর্টিসলসহ বেশ কিছু হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। দিনের পর দিন এসব জটিলতা আমাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে মস্তিষ্ক ও হৃৎপিণ্ডের ক্ষতি করে। সে জন্য ধ্যান ও মনঃসংযোগই আপনাকে নির্ভার রাখতে সাহায্য করতে পারে।

৩. ভালো ঘুমের প্রয়োজন

আপনার ভালো ঘুম মানেই সুস্থ শরীর। শরীরের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার কাজটি করে থাকে ভালো ঘুম। এ বিষয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, ভালো ঘুম শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, ওজন নিয়ন্ত্রণ, বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা এবং মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখে। এতে দীর্ঘায়ুর সম্ভাবনাও থাকে। প্রাপ্তবয়স্কদের রাতে সাধারণত সাত ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। আবার ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমানো শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই ঠিকমতো সাত ঘণ্টার ঘুম আপনাকে রোগ থেকে দূরে রাখবে এবং দীর্ঘায়ু পেতে সহায়ক হবে।

৪. সময়মতো খাবার

আপনি যদি ভালো ঘুমকে দীর্ঘদিন সুস্থ থাকার কারিগর বলে থাকেন, তবে খাদ্যাভ্যাস হলো জ্বালানি। যেখানে প্রাকৃতিক ও গোটা শস্যজাতীয় খাবারকে প্রাধান্য দিতে হবে বলে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা এমন খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হওয়ার কথা বলছেন।

তার মানে হলো— প্রতিদিন ফল, শাকসবজি, ডাল বা বীজজাতীয় খাবার খেতে হবে। একই সঙ্গে এড়িয়ে চলতে হবে প্রক্রিয়াজাত খাবার। কারণ প্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকে অনেক লবণ, চিনি, কৃত্রিম ফ্লেভার, কেমিক্যাল। এসব খাবার আমাদের হজমশক্তি ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে শরীরের প্রদাহ বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়া মিষ্টিজাতীয় খাবার মাঝেমধ্যে খেলেও নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস কমিয়ে আনতে হবে।  সেই সঙ্গে আপনার খাবারের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। শরীরের পুষ্টির চাহিদায় মনোযোগ দিতে হবে। এতে ধীরে ধীরে হজমশক্তি ভালো হবে, ঘন ঘন ক্ষুধা পাওয়া বা নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি অদম্য টানের ওপর নিয়ন্ত্রণ আসবে।

৫. পরিবেশ দূষণ থেকে বাঁচা

দূষণ থেকে বাঁচার অভ্যাস তৈরি করা খুবই কঠিন। কারণ বাংলাদেশে প্রতিদিনই দূষণ বাড়ছে। এ বিষয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুদূষণ, মাইক্রোপ্লাস্টিক ও কেমিক্যালের ঝুঁকিও আমরা কমাতে পারি কিছু অভ্যাস রপ্ত করলে। বাতাসে ভাসমান ক্ষতিকর পদার্থের কণা মানবদেহের ফুসফুস— এমনকি রক্তে মিশে যায়।

ফুসফুস, হৃৎপিণ্ডসহ অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি করে। ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। এ ক্ষেত্রে এয়ার পিউরিফায়ার, মাইক্রোপ্লাস্টিক থেকে রক্ষায় ফিল্টার করা খাওয়ার পানি এবং প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাচ বা স্টেইনলেস স্টিলের পাত্র ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ