শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডে গণহত্যার শিকারদের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসিনিউজবিডি, (১৭ নভেম্বর) : অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের জন্য যারা ব্যক্তিগতভাবে দায়ী তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই তদন্ত করতে হবে এবং ন্যায্য বিচারের মাধ্যমে তাদের বিচার করতে হবে। তবে, এই বিচার এবং সাজা ন্যায্য বা ন্যায়সঙ্গত নয়। ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহিতা প্রয়োজন, তবুও এই মৃত্যুদণ্ড কেবল মানবাধিকার লঙ্ঘনকে আরও জটিল করে তোলে। এটি চূড়ান্ত নিষ্ঠুর, অবমাননাকর এবং অমানবিক শাস্তি এবং কোনও বিচার প্রক্রিয়ায় এর কোনও স্থান নেই।”
তিনি আরো বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই থেকে আগস্টের মধ্যে ১,৪০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং হাজার হাজার আহত হয়েছেন। বেঁচে যাওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে এমনভাবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মান পূরণ করে কঠোরভাবে স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ বিচার পরিচালনা করা হোক। কিন্তু তার পরিবর্তে, এই বিচার এমন একটি আদালতে পরিচালিত হয়েছে যার স্বাধীনতার অভাব এবং অন্যায্য কার্যক্রমের ইতিহাসের জন্য অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচনা করে আসছে। অধিকন্তু, শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে এই বিচারের অভূতপূর্ব গতি এবং রায় জটিলতার সৃষ্টি করে। ন্যায্য বিচার প্রতিষ্ঠা না করার উদ্বেগ তৈরি করে। যদিও আদালতে শেখ হাসিনার প্রতিনিধিত্বকারী একজন আদালত-নিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন, কিন্তু তার আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রস্তুতির জন্য স্পষ্টতই পর্যাপ্ত সময় ছিল না।”
সেক্ষেত্রে, বেঁচে যাওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার দাবি করে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মান পূরণ করে এমন স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ বিচারপ্রক্রিয়া পরিচালিত হোক।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব আরো যুক্ত করেন, “এটি একটি সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়া ছিল না। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের ভুক্তভোগীরা আরও ভালো কিছু (ন্যায়বিচার) পাওয়ার যোগ্য। বাংলাদেশের এমন একটি ন্যায়বিচার প্রক্রিয়া প্রয়োজন যা পক্ষপাতের সন্দেহের বাইরে। সম্পূর্ণরূপে ন্যায্য ও নিরপেক্ষ হবে এবং মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে আরও মানবাধিকার লঙ্ঘনের আদেশ দেবে না। তবেই প্রকৃত এবং অর্থপূর্ণ সত্য, ন্যায়বিচার এবং ক্ষতিপূরণ প্রদান করা সম্ভব হবে।”
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সব ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে। সেটি অপরাধের প্রকৃতি বা পরিস্থিতি, অপরাধবোধ, বা ব্যক্তির অন্যান্য বৈশিষ্ট্য, অথবা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক ব্যবহৃত পদ্ধতি নির্বিশেষে।
এরপর অ্যাগনেস ক্যালামার্ডের বিবৃতিতে এই বিচারপ্রক্রিয়া এবং ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সমগ্র প্রেক্ষাপট নিয়ে নীচের ‘পটভূমি’ অংশটুকু যুক্ত করা হয়।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের (বিক্ষোভকারীরা যাদের ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক বলে মনে করত) জন্য সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের প্রতিক্রিয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর বেআইনি সহিংসতা চালালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ তীব্রতর হয়। এরপর মারাত্মক সহিংসতার পর হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান এবং জুন মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার ,সরকারের অন্যান্য সদস্য এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন প্রসিকিউটররা।
গত বছর, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সারা দেশে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন কোটা-সংস্কার বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে সংঘটিত সহিংসতা ও দমন-পীড়নের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। আমরা ছাত্র ও বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মারাত্মক এবং কম-প্রাণঘাতী উভয় ধরণের বেআইনি শক্তি ব্যবহারের প্রমাণ সহ একটি যাচাইকরা ভিডিও সিরিজ প্রকাশ করেছি।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, যিনি সাবেক পুলিশ প্রধান ছিলেন এবং রাষ্ট্রীয় সাক্ষী হয়েছিলেন, তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি দোষ স্বীকার করেছেন এবং সরাসরি তার বিচার করা হয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বারবার রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত এবং পদ্ধতিগত ন্যায্য বিচার লঙ্ঘনের জন্য বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সমালোচনা করেছে, যার মধ্যে মৃত্যুদণ্ডের জন্য চাপ প্রয়োগ এবং বিরোধীদের বিরুদ্ধে অবমাননার
