ট্রাভেল এজেন্সির অনিয়ম রোধে গভর্নরের সহযোগিতা চান বিমান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসি নিউজ, (১ অক্টোবর) : দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে কিছু নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ট্রাভেল এজেন্সি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুখরোচক বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ব্যাংকের মত করে ক্যাশ ডিপোজিট সংগ্রহ, টাকা পাচার, কর ফাঁকি দেওয়ার মত অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধে পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরকে একটি আধা সরকারি পত্র দিয়েছেন বাণিজ্য ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে শেখ বশিরউদ্দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে অধা সরকারি পত্রটি পাঠিয়েছেন।

উপদেষ্টার দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে- সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে নিবন্ধিত ট্রাভেল এজেন্সির বাইরেও বহু সংখ্যক অনিবন্ধিত ট্রাভেল এজেন্সি রয়েছে। যেসব এজেন্সি অফলাইনে ও অনলাইনে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধমূলক আর্থিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। যেমন অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাশ ডিপোজিট অথবা অগ্রিম পেমেন্ট-এর ভিত্তিতে ক্যাশব্যাক অফার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপোজিট স্কিম ও বিনিয়োগ স্কিমের মত অর্থ সংগ্রহের কার্যক্রম গ্রহণ, টাকা পাচার, রাজস্ব ফাঁকি, ইত্যাদি কার্যক্রমে লিপ্ত রয়েছে।

সম্প্রতি ফ্লাইট এক্সপার্ট নামের একটি অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির মালিক এ ধরণের প্রতারণামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে দেশ ছেড়েছে। বিষয়টি গুরুতর এবং উদ্বেগজনক। এক্ষেত্রে নিবন্ধিত কিংবা অনিবন্ধিত যে কোনো ট্রাভেল এজেন্সির অপরাধমূলক কর্মকান্ড বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি।

উপদেষ্টার চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩, বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০২১ এবং বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২২-এর আলোকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে ট্রাভেল এজেন্সির নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হয়। ফলে নিবন্ধিত বৈধ ট্রাভেল এজেন্সিগুলো অফলাইনে ও অনলাইনে বর্ণিত আইন ও বিধিমালা যথাযথভাবে প্রতিপালন সাপেক্ষে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে।

তবে বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২২ এর ১৫(ঘ) বিধিতে ট্রাভেল এজেন্সির সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কোন কার্যক্রম অবৈধভাবে গ্রহণ করা আচরণবিধি লঙ্ঘন বা পরিপন্থী। বাংলাদেশ ব্যাংক কোম্পানি আইন, ২০২৩ অনুযায়ী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার একমাত্র অধিকার বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। ফলে ট্রাভেল এজেন্সি কর্তৃক বাজার থেকে অগ্রিম কমিশন/ ইনসেনটিভ লভ্যাংশের লোভনীয় প্রস্তাবের বিনিময়ে আমানত সংগ্রহ এবং বিনিয়োগের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক কোম্পানি আইন, ২০২৩ এবং ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী বেআইনি ও অবৈধ কার্যকলাপ।

উপদেষ্টা তার এই চিঠিতে বলেন, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী এ ধরনের ক্যাশ লেনদেন অবৈধ। অথচ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ট্রাভেল এজেন্সি ও গ্রাহকদের আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত একটি আনুষ্ঠানিক সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ মোক্তার হোসেন জানান যে, ট্রাভেল এজেন্সি কর্তৃক ক্যাশ ডিপোজিট অথবা অগ্রিম পেমেন্টের ভিত্তিতে আমানত সংগ্রহ ও বিনিয়েগের বিষয়টি আইনের পরিপন্থী নয়। যদিও সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী এ ধরনের কার্যক্রম আইন সম্মত নয়।

বাণিজ্য উপদেষ্টা গভর্নরকে বলেন, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিস্তার রোধ একটি সামগ্রিক ও সামষ্টিক বিষয়। এক্ষেত্রে ট্রাভেল এজেন্সি সংক্রান্ত অপরাধের বহুমাত্রিকতার কারণে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ, রাজস্ব ফাঁকি রোধ,ট্রাভেল এজেন্সির ক্যাশ ডিপোজিট সংক্রান্ত অবৈধ কার্যক্রম বন্ধকরণ ইত্যাদি আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে আপনার ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ