ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনাকে স্বাগত জানাল মুসলিম নেতারা, চাপে হামাস
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ, (১ অক্টোবর) : গাজা যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে সৌদি আরব, তুরস্ক, পাকিস্তান, কাতার, মিসর, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও ইন্দোনেশিয়া। এর পাশাপাশি ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষও পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে, যা আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
যৌথ বিবৃতি দিয়েছে ৮ মুসলিম দেশ
সৌদি আরব, তুরস্ক, পাকিস্তান, কাতার, মিসর, জর্ডান, ইউএই ও ইন্দোনেশিয়া এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ, মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা, ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ রোধ এবং দুই-রাষ্ট্র সমাধানের ভিত্তিতে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ট্রাম্পের প্রস্তাবকে তারা স্বাগত জানায়। বিবৃতিতে পশ্চিম তীরের সংযুক্তিকরণ রোধে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতিরও প্রশংসা করা হয়।
এরদোয়ান ও শেহবাজ শরিফের প্রশংসা
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান এক টুইটে বলেন, “গাজায় রক্তপাত বন্ধ ও যুদ্ধবিরতি আনতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রচেষ্টা ও নেতৃত্বকে আমি প্রশংসা করি। তুরস্ক ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখবে।”
অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মধ্যে টেকসই শান্তি অঞ্চলের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। দুই-রাষ্ট্র সমাধানই স্থায়ী শান্তির মূল চাবিকাঠি।”
হামাসকে প্রস্তাব হস্তান্তর, ট্রাম্পের হুমকি
কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় হোয়াইট হাউসের প্রস্তাব হামাসের আলোচক দলের কাছে পৌঁছেছে। হামাস জানিয়েছে, তারা বিষয়টি দায়িত্বশীলভাবে পর্যালোচনা করবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, হামাসের কাছে গাজা পরিকল্পনার ব্যাপারে মতামত জানানোর জন্য ৩-৪ দিন সময় আছে। যদি হামাস এই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে ইসরায়েল যা করার তাই করবে।
এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ট্রাম্পের পরিকল্পনা একপাক্ষিক ও ফিলিস্তিনিদের অধিকারহীন বলে দাবি করেছে হামাস। তবে ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনার আনুষ্ঠানিক উত্তর নয় এটি।
হামাসের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব পুরোপুরি ইসরায়েলের পক্ষে এবং এতে এমন সব শর্ত আরোপ করা হয়েছে যা হামাসকে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে তৈরি।
অন্যদিকে এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা রয়টার্স-কে বলেন, ট্রাম্পের প্রস্তাব আসলে ইসরায়েলের সব শর্ত হুবহু গ্রহণ করা, যেখানে ফিলিস্তিনি জনগণ বা গাজার বাসিন্দাদের কোনো বৈধ অধিকার দেওয়া হয়নি।
ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর নেতানিয়াহু ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘‘হামাস আমাদের কী একঘরে করবে, আমরাই তাদের একঘরে করে দিয়েছি।’’
হুথিদের সমালোচনা
তবে ইয়েমেনের হুথি আন্দোলন ভিন্ন সুর তুলেছে। আনসারুল্লাহর রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য মোহাম্মদ আল-ফারাহ বলেছেন, “ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়। এর লক্ষ্য হামাসকে দায়ী করা, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বজনমতের ক্ষোভ প্রশমিত করা এবং ফিলিস্তিনের প্রতি বৈশ্বিক সংহতি দুর্বল করা।”
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষও প্রকাশ্যে ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে।
পুরো মুসলিম বিশ্বের পাশাপাশি সরাসরি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সমর্থন পরিকল্পনাটিকে আলাদা গুরুত্ব দিয়েছে, যা হামাসকে আরও চাপের মুখে ফেলবে নিঃসন্দেহে। এমন ভঙ্গুর অবস্থায় সকলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে হামাস কি স্বাধীন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে?। সূত্র: রয়টার্স, আল জাজিরা