এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন ভারত
ক্রীড়া প্রতিবেদক, এবিসি নিউজ, ঢাকা (২৯ সেপ্টেম্বর) : এশিয়া কাপের ফাইনাল যেন রূপ নেয় নাটকীয় পতনের গল্পে। ১ উইকেটে ১১৩ রানে পাকিস্তান যখন অপ্রতিরোধ্য ভঙ্গিতে এগোচ্ছিল, তখনো কেউ ভাবেনি শেষ পর্যন্ত মাত্র ১৪৬ রানে গুটিয়ে যাবে তারা। ৪৪ বল হাতে থাকা অবস্থায় পতন হয় বাকি ৯ উইকেটের। তাও আবার ধসটা হয়েছে মাত্র ৩৩ রানের ব্যবধানে! তার পরও আগের দুই লড়াইয়ের মতো সহজ হয়নি ম্যাচ। এবারের লড়াই ছড়িয়েছে রোমাঞ্চ। পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচ শেষ ওভারে গিয়ে জিতেছে ভারত। ৫ উইকেটের জয়ে শিরোপা থাকলো তাদেরই হাতে। ভারত ১৪৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করেছে দুই বল হাতে রেখে।
টুর্নামেন্টের ৪১ বছরের ইতিহাসে ফাইনালে প্রথমবার মুখোমুখি হয় দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী। ১৪৭ রানের লক্ষ্যটা মামুলি মনে হলেও পাওয়ার প্লেতে ২০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপ পড়ে ভারত! তার পর দলটাকে জয়ের পথে তুলেছেন মূলত তিলক বর্মা। শুরুতে সাঞ্জু স্যামসনকে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে ৫৭ রান যোগ করেছেন। সাঞ্জুর (২৪) আউটে ৭৭ রানে পড়ে চতু্র্থ উইকেট। চাপের মুহূর্তে তখন তিলকের সঙ্গী হন শিবম দুবে। এই জুটি ভারতকে টেনে নিতে থাকে।
১৮.৬ ওভারে ৬০ রানের জুটি ভাঙে ফাহিমের বলে দুবে (৩৩) ক্যাচ আউট হলে। তখন আবার চাপে পড়ে ভারত। ৬ বলে দরকার পড়ে ১০ রান। কিন্তু ফিনিশার খ্যাত তিলক প্রথম বলে ডাবল নিয়ে পরের বলে হারিস রউফকে ছক্কা মেরে সব চাপ আছড়ে ফেলেন তিনি। পরের দুই বলে সিঙ্গেল আর বাউন্ডারি মেরে নিশ্চিত করেন দলের রেকর্ড নবম শিরোপা। ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলা তিলক ৫৩ বলে ৬৯ রানে অপরাজিত থেকেছেন। তাতে ছিল ৩টি চার ও ৪টি ছয়।
পাকিস্তানের হয়ে ২৯ রানে ৩ উইকেট নেন ফাহিম আশরাফ। একটি করে নেন শাহীন আফ্রিদি ও আবরার আহমেদ।
অথচ পাকিস্তানের শুরুটা ভিন্ন কিছুর জানান দিচ্ছিল। শাহেবজাদা ফারহান ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছিলেন। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়ে ভারতের বোলারদের চাপে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। কুলদীপ যাদবের প্রথম দুই ওভারে ২৩ রান নেন পাকিস্তানি ব্যাটাররা। চোটের কারণে হার্দিক পান্ডিয়ার না থাকা ভারতের জন্য ছিল উদ্বেগজনক।
কিন্তু হঠাৎ করেই সব বদলে যায়। ১৩তম থেকে ১৮তম ওভার পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি ওভারে একটি করে উইকেট পড়তে থাকে পাকিস্তানের। কুলদীপ নিজের শেষ ওভারে একাই তিনটি উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন।
শেষ কাজটা সেরে দেন জসপ্রীত বুমরা। প্রথম স্পেলে পাকিস্তানি ব্যাটারদের সঙ্গে কথার লড়াইয়ের পর তিনি শেষ ওভারে হারিস রউফকে বোল্ড করেন। এরপর উদযাপনে কিছু পতনের ভঙ্গি করে রউফের আগের সপ্তাহের ইশারার জবাব দেন।
তবে ভারতের বোলিং আক্রমণের আসল নায়ক ছিলেন বরুণ চক্রবর্তী। চাপের সময়ে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্পেল করেছেন তিনি। পাওয়ারপ্লেতে শুরুর আঘাত, এরপর ফারহানকে ফেরানো, আর মাঝপথে ফখর জামানকে আউট করে পাকিস্তানের ভরসার জায়গা ভেঙে দেন তিনি। ফারহান (৫৭) আর ফখর (৪৬) ছাড়া পাকিস্তানের আর কোনও ব্যাটার ১৫ রানও করতে পারেননি। ফারহানের ৩৮ বলের ইনিংসে ছিল ৫টি চার ও ৩টি ছয়। ফখরের ৩৫ বলের ইনিংসে ছিল ২টি চার ও ২টি ছয়।
শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের ব্যাটিং ধসই ফাইনালের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। একসময় ম্যাচে এগিয়ে থেকেও এমন পতন যে কতটা হতাশাজনক, সেটা আবার প্রমাণ হলো দুবাইয়ের মঞ্চে।
কুলদীপ ৩০ রানে নেন ৪ উইকেট। দুটি করে নেন জসপ্রীত বুমরা, বরুণ চক্রবর্তী ও অক্ষর প্যাটেল।