মোবাইল ফোনে ৫৭% শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (১১ নভেম্বর) : দেশে মোবাইল ফোন আমদানিতে ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত অস্বাভাবিক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
সম্প্রতি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এক প্রজ্ঞাপনে জানায়, আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) সিস্টেম চালু করা হবে। এই সিস্টেম চালু হলে প্রবাসীদের মাধ্যমে আনা মোবাইল ফোন বিক্রির বাজার, যা ‘গ্রে মার্কেট’ নামে পরিচিত’ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে। এতে দেশের অসংখ্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতা তাদের পেশা হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন।
সোমবার (১০ নভেম্বর) বিটিআরসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আমিনুল হকের সঙ্গে দেখা করেন মোবাইল বিজনেস কমিউনিটির সভাপতি মো. আসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ পিয়াসসহ ব্যবসায়ী নেতারা। এসময় তারা বিটিআরসির কাছে এনইআইআর সিস্টেম চালুর বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন এবং সহযোগিতা চান। বৈঠকে বিটিআরসির কর্মকর্তারা জানান, ট্যাক্স ও ভ্যাটের বিষয়টি তাদের এখতিয়ারের বাইরে, এটি মূলত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিষয়।
তারা আরও বলেন, ১৬ ডিসেম্বর থেকে এনইআইআর সিস্টেম চালুর বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা এসেছে, তাই বিটিআরসি এককভাবে এটি স্থগিত করতে পারবে না। তবে কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের সরকার ও এনবিআরের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার পরামর্শ দিয়েছেন।
ব্যবসায়ীরা বৈঠকে অনুরোধ করেন, যেহেতু জাতীয় বাজেট সাধারণত জুন-জুলাই মাসে হয়, তাই এনইআইআর সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্তটি অন্তত বাজেট পর্যন্ত স্থগিত রাখা হোক। তাদের আশঙ্কা, ১৬ ডিসেম্বরের পর যদি সিস্টেমটি চালু হয়, তাহলে তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে, কর্মচারীদের বেতন দেওয়া সম্ভব হবে না এবং হাজার হাজার পরিবার চরম দুর্ভোগে পড়বে। এই প্রেক্ষাপটে মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিশেষ আহবান জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন, তার হাত ধরেই একসময় গ্রামীণফোন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছেছিল, আর তার নীতিগত সহযোগিতায় টেলিকম খাতের প্রসার ঘটেছিল। তাই তারা অনুরোধ করেছেন, তিনি যেন আবারও হস্তক্ষেপ করে এনবিআরকে নির্দেশ দেন, যাতে ট্যাক্সের হার সহনীয় মাত্রায় আনা হয় এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা টিকে থাকার সুযোগ পান।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের সভাপতি মো. আসলাম বলেন, সরকার যে ট্যাক্স কাঠামো চালু করেছে, তা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পক্ষে টিকে থাকা অসম্ভব করে তুলছে। নতুন এই নীতি চালু হলে আমাদের পথে বসতে হবে। ২০১৭ সাল থেকে বিদেশি কিছু কম্পানি দেশে অ্যাসেম্বলিংয়ের মাধ্যমে ফোন তৈরি করছে, ফলে তারা খুব কম ট্যাক্সে বাজারে পণ্য বিক্রি করতে পারছেন। কিন্তু যারা বিদেশ থেকে ব্র্যান্ডেড ফোন, যেমন আইফোন বৈধভাবে আমদানি করে বিক্রি করেন, তাঁদের ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত অস্বাভাবিক ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। ফলে দুই লাখ টাকার ফোন ট্যাক্সসহ দাঁড়াচ্ছে প্রায় তিন লাখ ১৪ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, আমরা উৎপাদকদের বিরুদ্ধে নই, তবে ট্যাক্সের এই বৈষম্য ছোট ব্যবসায়ীদের ধ্বংস করছে। আমাদের দাবি, ট্যাক্স সহনশীল মাত্রায় আনা হোক এবং ক্ষুদ্র আমদানিকারকদেরও ৫০ বা ১০০ পিস করে ফোন বৈধভাবে আনার সুযোগ দেওয়া হোক।
তিনি বলেন, বিটিআরসি জানিয়েছে, সরকারের নির্দেশে ১৬ ডিসেম্বর থেকেই এনইআইআর সিস্টেম চালু করা হবে। কিন্তু বাজেট জুন-জুলাইয়ে হয়, তাই ওই সময়ের আগে এই পদক্ষেপ ব্যবসায়ীদের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। তিনি প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, আপনি যেন এনবিআরকে ট্যাক্স নীতিমালা সহজ ও সহনশীল করতে নির্দেশ দেন, যাতে আমরা বৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারি।
ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, এনইআইআর সিস্টেম চালু হলে দেশের মোবাইল ফোন বাজারে মাত্র ৮ থেকে ১০টি কম্পানি একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ পাবে। এই কম্পানিগুলোর নিজস্ব সার্ভিস সেন্টার রয়েছে, ফলে তারা সহজেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। কিন্তু দেশের ৯৫ শতাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী- যারা এই খাতের মূল চালিকাশক্তি, তাঁরা এক ধাক্কায় ব্যবসা হারাবেন।
তাদের মতে, এই নীতিমালা কার্যকর হলে লাখ লাখ পরিবারের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, যেন তাঁদেরও সীমিত পরিসরে মোবাইল ফোন আমদানি করার সুযোগ দেওয়া হয়।
ব্যবসায়ীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, তারা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চান, কিন্তু যদি তাদের জীবিকার ওপর আঘাত আসে, পেটে লাথি মারা হয়, তাহলে তারা রাজপথে নামতে বাধ্য হবেন। তাদের মতে, সরকার দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে দেশের মোবাইল ফোন খাত একচেটিয়া হয়ে যাবে, সাধারণ মানুষকে বেশি দাম দিয়ে ফোন কিনতে হবে, আর লাখো পরিবার বেকার হয়ে পড়বে।
