চায়না ক্লে পাউডারের আড়ালে ঘোষণা বহির্ভূত ভায়াগ্রার কাঁচামাল আমদানি

নিজস্ব প্রতিবেদক (রংপুর), এবিসিনিউজবিডি, (২৯ অক্টোবর) : আমদানির ঘোষণা চায়না ক্লে পাউডার (রাবার গ্রেড) বা কাওলিনিকে ক্লে থাকলেও আড়ালে আমদানি করা হয়েছে ঘোষণা বহির্ভূত ভায়াগ্রার কাঁচামাল। এ ঘটনায় চায়না ক্লের শুল্ককর পরিশোধ সাপেক্ষে বাজেয়াপ্তের পরিবর্তে এক লাখ টাকা বিমোচন জরিমানা ও প্রায় ৩ কোটি টাকা জরিমানা করেছে রংপুর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট।

গত ১৪ অক্টোবর এই বিচারাদেশ দেয় রংপুর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জরিমানার পাশাপাশি চালানটি (ওষুধের কাঁচামাল) রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধায় মুঠোফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ।

সূত্রমতে, ঢাকার একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান উজালা পেইন্ট ট্রেডিং কোং প্রতিষ্ঠানটি গত ১ আগস্ট চায়না ক্লে পাউডার (রাবার গ্রেড) বা কাওলিনিকে ক্লে ঘোষণায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে একটি পণ্য চালান আমদানি করে। এক হাজার ১১৪ বস্তায় ভারত থেকে ঘোষণা অনুযায়ী চায়না ক্লে আমদানি করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু চায়না ক্লে’র মধ্যে বিশেষ কায়দায় আমদানি করা হয়েছে ঘোষণা বহির্ভূত প্রায় ১৬ হাজার কেজি ওষুধের কাঁচামাল। ৩৭ ধরনের ওষুধের এই কাঁচামালের মধ্যে আমদানি হয়েছে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর আমদানি নিয়ন্ত্রিত ৫ হাজার ৮০৫ কেজি সিলডেনাফিল সাইট্রেট, যা ভায়াগ্রা নামে পরিচিত।

এরপর ৭ আগস্ট সিঅ্যান্ডএফ বাবুল এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। কিন্তু ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য আমদানি হয়েছে এমন তথ্য থাকায় হিলি স্থল কাস্টমস স্টেশনের কর্মকর্তারা চালানটি আটক করে।

পরে কায়িক পরীক্ষা করে দেখা যায়, চালানটিতে ১ হাজার ১১৪ বস্তা ৩০ হাজার ২৪৫ কেজি পণ্য রয়েছে। প্রতিটি বস্তার গায়ে ‘চায়না ক্লে পাউডার (রাবার গ্রেড)’ লেখা রয়েছে। পরে বস্তাগুলো খোলা হলে চায়না ক্লে’র ভেতরে একাধিক ছোট ছোট প্যাকেট পাওয়া যায়। তবে যেসব বস্তার মধ্যে প্যাকেট পাওয়া যায় সে সব বস্তার উপরে বিভিন্ন রকম সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে। আবার এসব বস্তার মধ্যে একই রং ও বর্ণের পণ্য পাওয়া গেছে, যা চায়না ক্লে নয়।

পরে ৭৩টি নমুনা সংগ্রহ করে কাস্টমস কর্মকর্তারা পরীক্ষার জন্য খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) পাঠানো হয়। গত ২৬ আগস্ট কুয়েট থেকে রিপোর্টে সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে।

এরপর গত ১৪ অক্টোবর বিচারাদেশ দেয় রংপুর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট।

সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ বলেন, ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য আমদানি করায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে  অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চালানটি (ওষুধের কাঁচামাল) রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এরকম কেউ করলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভায়াগ্রা এক ধরনের মাদক। এই বিপুল পরিমাণ ভায়াগ্রা দেশে প্রবেশ করলে তা দিয়ে বিপুল পরিমাণ জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর যৌন উত্তেজক ওষুধ তৈরি হতো বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্রমতে, ওষুধের কাঁচামাল আমদানি নীতি আদেশ, ২০২১-২০২৪ অনুযায়ী ব্লক লিস্ট পণ্য, যা আমদানি করতে হলে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হবে। আমদানিকারক অনুমতি ব্যতীত ওষুধের কাঁচামাল এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর সিলডেনাফিল সাইট্রেট বা ভায়াগ্রা আমদানি করেছে। আমদানিকারকের ঘোষণা অনুযায়ী পণ্য চালানের প্রযোজ্য শুল্ককর ১ কোটি ৭৬ লাখ ৩২৫ টাকা। তবে সঠিক এইচএস কোড অনুযায়ী আমদানি করা পণ্যের প্রযোজ্য শুল্ককর ১ কোটি ৪৯ লাখ ৭ হাজার ৯৭৩ টাকা। অসত্য ঘোষণায় প্রতিষ্ঠানটি ১ কোটি ৪৭ লাখ ৩১ হাজার ৬৪৭ টাকা শুল্ককর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

সূত্রমতে, ঘোষণা বহির্ভূত এবং অনুমতি ব্যতীত ওষুধের কাঁচামাল, জনস্বাস্থ্যের জন্য ভায়াগ্রা আমদানি করায় প্রতিষ্ঠানকে ২১ সেপ্টেম্বর কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি ৬ অক্টোবর নোটিশের জবাব দেয়। যাতে ভারতের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তাদের গুদাম থেকে ভুলে ওষুধের কাঁচামাল চায়না ক্লের মধ্যে দিয়েছে বলে দাবি করা হয় এবং আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নিজ ইচ্ছায় সরবরাহ করেনি বলে জানায়। তবে ওষুধের কাঁচামাল ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ভায়াগ্রা আমদানিতে আমদানিকারক কোনোভাবে দায় এড়াতে পারে না বলে তাদের বিরুদ্ধে বিচারাদেশ দেয় কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট।

প্রসঙ্গত, সিলডেনাফিল সাইট্রেট হচ্ছে ভায়াগ্রার সক্রিয় উপাদান। যা সাধারণত ২৫ মিলি গ্রাম, ৫০ মিলি গ্রাম ও ১০০ মিলি গ্রাম ডোজে ট্যাবলেট আকারে বিক্রি হয়। সেই হিসেবে এক কেজি সমান ১ হাজার গ্রাম। এক হাজার গ্রাম সমান ১০ লাখ মিলি গ্রাম। ২৫ মিলি গ্রাম ট্যাবলেট হলে এক কেজি ভায়াগ্রা দিয়ে ৪০ হাজার ভায়াগ্রা বানানো সম্ভব। একইভাবে এক কেজি ভায়াগ্রা দিয়ে ৫০ গ্রামের ২০ হাজার ও ১০০ গ্রামের ১০ হাজার ট্যাবলেট বানানো সম্ভব। হিসাব অনুযায়ী, ৫ হাজার ৮০৫ গ্রাম ভায়াগ্রা দিয়ে ২৫ মিলি গ্রামের ২৩ কোটি ২২ লাখ ট্যাবলেট বানানো সম্ভব। একইভাবে ৫০ মিলি গ্রামের ১১ কোটি ৬১ হাজার ও ১০০ মিলি গ্রামের ৫ কোটি ৮০ লাখ ট্যাবলেট বানানো সম্ভব।

 

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ