সুপারিশগুলো অধ্যাদেশ ও আদেশ অনুযায়ী বাস্তবায়নের জন্য আলাদা করা হয়েছে : আলী রীয়াজ

নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (২৮ অক্টোবর) : জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, সরকার কীভাবে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন করতে পারে, সেই সুপারিশ আমরা দিয়েছি। সুপারিশের কোনগুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে, কোনগুলো আদেশের (অর্ডারের) মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যাবে, সেটি আমরা আলাদা করে দিয়েছি।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে এক বিফ্রিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, কিছুক্ষণ আগে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালা প্রধান উপদেষ্টার নিকট পেশ করা হয়েছে। আজকের মধ্যে রাজনৈতিক দল যারা এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যু্ক্ত ছিলেন, তাদেরকে অবহিত করব।

তিনি আরও বলেন, ৬টি সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়। ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে সুপারিশগুলো আলোচনা করা হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত, বিশেষজ্ঞদের মতামত ও কমিশনের সদস্যদের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে সুপারিশগুলো করা হয়।

সুপারিশমালায় সংবিধান সংক্রান্ত ৪৮টি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, সরকারের সংবিধান সংস্কার বিষয়ক আদেশের অধীনে একটি গণভোটের আয়োজন হবে। এই গণভোটের মাধ্যমে আমরা সুপারিশ করেছি— সরকার যেন একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেন। সেটি হচ্ছে, এই যে আদেশ এবং আদেশের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত ৪৮টি সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয়, সেগুলো বাস্তবায়নের ব্যাপারে জনগণের সম্মতি আছে কি না? আমরা যে সুপারিশ করেছি তাতে বলা হয়েছে যে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ একই সঙ্গে সংবিধান সংস্কার পরিষদ এবং জাতীয় সংসদ হিসেবে কার্যকর থাকবে। তবে, সংবিধান সংস্কার পরিষদ কার্যকর থাকবে ২৭০ দিন। গণভোটে যদি জনগণের সম্মতি পাওয়া যায়, সেই বিষয়গুলো সংবিধানে সংযুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় সব রকম বিধি-বিধান, সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করবেন।

তিনি বলেন, আমরা বলেছি— একটি অন্যতম বিষয় হচ্ছে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা। সংবিধান সংস্কার কমিশন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট সুপারিশ ছিল, ভোটের সংখ্যানুপাতে ১০০ সদস্যের একটি উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা। সেই মোতাবেক যদি জনগণের সম্মতি পাওয়া যায়, তবে জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠার ৪৫ দিনের মধ্যে উচ্চকক্ষ গঠন বিষয়ক প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত হবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, প্রথমবারের মতো যে উচ্চকক্ষ গঠিত হবে, সেই উচ্চকক্ষের আগের থেকে তালিকা প্রকাশ করার যে বিধান আছে, সেটা ‘ওয়েভ’ করা হবে, কার্যকর হবে না। আমরা এই আদেশের আওতায় গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন এবং ২৭০ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিবর্জন, পরিবর্তন, পরিবর্ধনের জন্য আমরা কনস্টিটিউট পাওয়ার হিসেবে জনগণের ক্ষমতা যেন ব্যবহৃত হয়, সেজন্য এই পরিষদের প্রস্তাব করেছি। আমরা আশা করি যে এই প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে তা অর্জন করা যাবে।

তিনি বলেন, আমাদের আরও একটি বিকল্প প্রস্তাব আছে। দ্বিতীয় বিকল্পেও বলা হচ্ছে যে, সরকার একটি আদেশ জারি করবেন। সেই আদেশের অধীনে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটে একটি মাত্র প্রশ্ন থাকবে। তবে, ওই আদেশের তফসিলে যে ৪৮টি বিষয় আছে, সেগুলোকে অন্তর্বর্তী সরকার বিল আকারে প্রস্তুত করে জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, যখন বিল হিসেবে উপস্থাপিত হবে এবং গণভোটের মধ্যদিয়ে যদি জনগণের সম্মতি লাভ করা যায়, তবে ওই বিলটি সংবিধান সংস্কার পরিষদের কাজে সহযোগিতা করবে। এটা কোনো অবস্থাতেই কেবলমাত্র তাদের গ্রহণের জন্য দেওয়া হবে না। তাদেরকে দেওয়া হবে এটি যেন তাদের কাজে সহযোগিতা করে। অর্থাৎ সংবিধান সংস্কারের জন্য যে পরিষদ তৈরি হবে, সেই পরিষদ জুলাই জাতীয় সনদের স্পিরিটকে ধারণ করে সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিবর্জন ও পরিবর্তন করতে পারবে। তবে, এই বিল যদি জনগণের দ্বারা অনুমোদিত হয়, এটি তাদের সাহায্য করবে। এই বিলগুলোর যে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সংযোজনের বিষয়গুলো, তা জনগণের দ্বারা সম্মত হবে।

আলী রীয়াজ বলেন, যদি সংবিধান সংস্কার পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যে তাদের দায়িত্ব সম্পাদন করতে না পারে, তাহলে গণভোটে পাস হওয়া বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্থাৎ আপনা-আপনি সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদগুলোকে প্রতিস্থাপন করবে। ২৭০ দিনের দায়িত্ব পালনের পর সংবিধান সংস্কার পরিষদ তার কার্যক্রম সমাপ্ত করবে। নির্বাচনের পর থেকে জাতীয় সংসদ, জাতীয় সংসদ হিসেবে কার্যকর থাকবে। যদিও জাতীয় সংসদের সদস্যরাই সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হচ্ছেন, তথাপি আমরা প্রস্তাব করেছি জাতীয় সংসদ সদস্যরা একাধিক ক্রমে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে আলাদা-আলাদাভাবে শপথ গ্রহণ করবেন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ