সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে রোগীর খাবার নিয়ে নৈরাজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক (নীলফামারী), এবিসিনিউজবিডি, (২৬ অক্টোবর) : সময়মতো খাবার না দেওয়া এবং পরিমাণে কম দেওয়ার মতো অব্যবস্থাপনা চলছে নীলফামারীর সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে। রোগীদের দুপুরের খাবার দুপুর ১২টার পরিবর্তে দেওয়া হয় বেলা সাড়ে ৩টায়। ফলে দীর্ঘ সময় খাবার না পেয়ে রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। বাধ্য হয়ে অনেক রোগী বাইরে থেকে খাবার কিনে আনেন।

এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঠিকাদারের দায়িত্বে থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কারণ তিনি পালিয়ে থেকেও আগের মতোই দুর্নীতি অনিয়ম অব্যাহত রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা অসহায় দরিদ্রদের। দিনের পর দিন এ দূরাবস্থা চললেও নির্বিকার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সরকারের উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীলদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

বেলা ৩টাতেও রোগীদের দুপুরের খাবার দেওয়া হয়নি এমন খবর পেয়ে গত ২৩ অক্টোবর সংবাদকর্মীরা হাসপাতালে যান। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বাবুর্চি তখনো মুরগির মাংস কাটছেন। চুলায় ভাত ও ডাল রান্না করা হচ্ছে। বাবুর্চি জানান, প্রতিদিন ঠিক সময়ই খাবার রান্না হয়। আজ (২৩ অক্টোবর) ঠিকাদার বাজার আনতে দেরি করেছেন, তাই কেবল চুলা জ্বালানো হয়েছে।

সেখানে থাকা ঠিকাদারের প্রতিনিধি মো. বাদশা বলেন, ‘ঠিকাদার হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিনুল হক মহসিন ও কাজল। তাদের অনুপস্থিতিতে আমার ছেলে বাবুল মালামাল সরবরাহ করে। কিন্তু আজ সে অসুস্থ। তাই আমি বাজার নিয়ে এসেছি। এজন্য একটু দেরি হয়েছে।’ তখন তিনি ঠিকাদার মহসিনকে মোবাইলে কল করেন। কিন্তু সাংবাদিক আসার তথ্য পেয়ে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার গছাহারা আলোকডিহি এলাকার তাহেরা বেগম (৬০) ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত বুধবার বিকালে হাসপাতাল ভর্তি হন। ওইদিন রাতে ও পরদিন সকালে খাবার দিলেও দুপুরের খাবার আসতে দেরি হয়। ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে বেলা আড়াইটার দিকে বাইরে থেকে কিছু চিড়া আর কলা কিনে খেয়েছেন।

সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের কাঙ্গালপাড়ার তহিদুল ইসলামের স্ত্রী শাবানা বেগম বলেন, ‘বুধবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। সকালে নাশতা পাইনি। এখন বেলা প্রায় সাড়ে ৩টা, অথচ এখনো দুপুরের খাবার দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে স্বামী-স্ত্রী মিলে বাইরে খেতে যাচ্ছি।’

আফরোজা নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘দুপুর ১২টার খাবার দেওয়া হয় বেলা সাড়ে ৩টায়। এত দেরিতে দুপুরের খাবার দেওয়ায় ওষুধও সঠিক সময়ে খাওয়া হয়নি। এতে রোগীদের চিকিৎসায় সমস্যা হচ্ছে। এভাবে কি সরকারি হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম চলতে পারে? সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে এমন অব্যবস্থাপনা মেনে নেওয়ার মতো না।’

হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি জানান, হাসপাতালে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি চলছে, বিশেষ করে রোগীর খাবার দেওয়ার ক্ষেত্রে। এখানে ১০০ শয্যার প্রতিজনের জন্য প্রতি বেলায় ন্যূনতম ১০০ গ্রাম মাছ বা মাংস বরাদ্দ রয়েছে। সে হিসেবে রাতে ও দুপুরে মাছ-মাংস রান্না করার কথা ১০ কেজি করে মোট ২০ কেজি। কিন্তু প্রতিদিন আট কেজি থেকে ১৫ কেজি কেনা হয়। এ কারণে রোগীদের দেওয়া মাছ ও মাংসের টুকরো ৫০-৭০ গ্রাম সাইজের করা হয়।

ডাল ও সবজি আনা হয় কমদামি। ভাতের চালও রান্না করা হয় নিম্নমানের। এ কারণে রোগীরা মানসম্মত খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ বাজারে দাম বেশি দেখিয়ে সরকারি বরাদ্দ ঠিকই তুলে নেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগ আমলের পুরো সময় ধরে এমন দুর্নীতি হয়েছে। ঠিকাদার এখনো একই অপকর্ম করছেন।

এসব বিষয়ে ঠিকাদার মহসিনুল হক মহসিন মোবাইলফোনে বলেন, ‘হাসপাতালে নিয়োজিত ব্যক্তি অসুস্থ থাকায় বাজার করতে দেরি হয়েছিল, তাই রান্নায় ব্যাঘাত ঘটছে। খাবার পরিবেশনে সময়ের হেরফের হয়েছে। তাতে কী হয়েছে।’

সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নাজমুল হুদা বলেন, ‘ঠিকাদার পলাতক থাকায় তিনি এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে। গত বছর নতুন টেন্ডারের উদ্যোগ নেওয়া হলে একজন ঠিকাদার আদালতে মামলা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ঠিকাদার পরিবর্তন করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমান ঠিকাদারের প্রতিনিধি এখন খাবার পরিবেশন করেন। বৃহস্পতিবার তিনি অসুস্থ থাকায় সময়মতো খাবার দিতে পারেননি। খাবার কম দেওয়ার অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হবে।’

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ