জলবায়ু সংকটে উপকূলের জীবিকা, পানি ও স্যানিটেশন বিপর্যস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক (খুলনা), এবিসিনিউজবিডি, (২৫ অক্টোবর) : জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্র অভিঘাতে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই অঞ্চলের মানুষ জীবিকা, নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের অভাবে মারাত্মক দুর্ভোগে রয়েছেন। সংকট এতটাই তীব্র যে, অনেকে ভিটেমাটি ছেড়ে শহরের বস্তিতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন— যা নতুন এক মানবিক বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী।

এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে এডুকো ও উত্তরণের সহযোগিতায় বাস্তবায়িত একটি প্রকল্পের অংশ। গবেষণার আওতায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ বুড়িগোয়ালিনী, গাবুরা ও পদ্মপুকুর ইউনিয়ন এবং সাতক্ষীরা পৌরসভার পাঁচটি বস্তি এলাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

গবেষণায় উঠে এসেছে, উপকূলীয় অঞ্চলে কর্মসংস্থানের ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়েছে। সিডর ও আইলার মতো ঘূর্ণিঝড়ে চিংড়ি ও ধানের খামার ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় মানুষ জীবিকার জন্য নেতিবাচক অভিযোজন কৌশলে বাধ্য হচ্ছেন।

প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ খাবার কমিয়ে দিয়েছেন, অনেকেই ভাত ও ডালের বাইরে অন্য কিছু খেতে পারছেন না। কর্মসংস্থানের অভাবে পুরুষেরা বছরের অধিকাংশ সময় বাইরে কাজ করতে যান, ফলে নারী-প্রধান পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে।

পানি ও স্যানিটেশনেও পরিস্থিতি শোচনীয়। নিরাপদ পানির তীব্র সংকট এবং অস্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন ব্যবস্থার কারণে নারী ও মেয়েরা গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের মধ্যে জরায়ুজনিত (৬০–৭৪%) ও প্রজননজনিত (৪৫–৬৬%) সমস্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দুর্বল নদী বাঁধও এই সংকটকে আরও তীব্র করছে।

বাস্তুহারা এসব মানুষ শহরের বস্তিতে আশ্রয় নিচ্ছেন, কিন্তু সেখানেও দুর্ভোগ কমছে না। অল্প আয়ে বেঁচে থাকা বস্তিবাসীরা অপর্যাপ্ত পানি, টয়লেট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে প্রতিনিয়ত জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছেন। শিশুদের স্কুলছুট ও শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতাও বাড়ছে।

অনেক পরিবার সরকারি খাস জমিতে থাকায় উচ্ছেদের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

গবেষক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলের মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে শহরের বস্তিতে আশ্রয় নিচ্ছেন, কিন্তু দুই জায়গাতেই তারা বিপর্যস্ত। উপকূলে লবণাক্ততা ও কর্মসংস্থানের অভাব, আর বস্তিতে দারিদ্র্য ও জলাবদ্ধতা— দুটোই সমান সংকট।”

তিনি বলেন, “সমাধান হিসেবে উপকূলে লবণাক্ততা-সহনশীল কৃষি চালু করতে হবে এবং বস্তিতে নগদ অর্থ নয়, বরং উপকরণ সহায়তা ও শিশুশ্রম বন্ধে শিক্ষা সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণ ছাড়া টেকসই সমাধান সম্ভব নয়।”

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ