সত্যজিৎ রায়, চলচ্চিত্রের এক রাজপুত্র

বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা (২ মে ২০২০) : আজ সত্যজিৎ রায়ের শততম জন্মদিন। ১৯২১ সালের এই দিনে তিনি জন্মেছিলেন। জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর প্রতি এই শ্রদ্ধার্ঘ্য

সত্যজিৎ রায় আমাদের বাড়িতে প্রথম ঢোকেন ‘বাক্স রহস্য’ হয়ে। গত শতাব্দির সত্তরের দশকের শেষ বা আশির দশকের শুরুর কোনো একদিন আমার অনুজ জন্মদিনে উপহার পেয়েছিল এই বই। ফেলুদা সেদিন থেকেই আমাদের আত্মার আত্মীয়। তবে ‘দেশ’ আর ‘আনন্দমেলা’র মাধ্যমে সত্যজিৎ রায় যে আমাদের জীবনে নিয়মিত হয়ে উঠবেন, সেটাও জানা গেল কদিন বাদে। পুরনো পুজো সংখ্যাগুলো নতুন করে ওল্টালেই পাওয়া যেতে লাগল শঙ্কু আর ফেলুদাকে। এ যেন নতুন এক রতেœর খনি। তখনও ভিসিআর আসেনি দেশে। বিদেশি চলচ্চিত্র দেখার জন্য বাংলাদেশ টেলিভিশন আর ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলনের পথ ধরে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসই ভরসা। আশির দশকের শুরুতে আমরাও যুক্ত হয়ে পড়লাম ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলনে। এনজয় ফিল্ম সোসাইটি আর পাইওনিয়ার ফিল্ম সোসাইটির তরুণ অগ্রজেরা আসতেন আমাদের বাড়িতে, আমার মেজ ভাই শাহীন রেজা নূরের কাছে। তিনি ছিলেন এই দুই ফিল্ম সোসাইটির সহ সভাপতি।

সে সময়েই ভারতীয় সংস্কৃতি কেন্দ্রে সত্যজিত রায়ের তৈরি ছবি দেখার সুযোগ ঘটে। প্রথমে ‘তিন কন্যা’, তারপর ‘সৎরঞ্জ কা খিলাড়ি’র মাধ্যমে পরিচয়। এরপর বাড়তে থাকে জানা–বোঝার পরিধি। উচ্চ মাধ্যমিকের কোনো এক সময়ে দেখে ফেলি ‘চারুলতা’। আর চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের নানা আলোচনা থেকে বুঝতে শুরু করি সত্যজিতের ছবিগুলোর নান্দনিকতা। মনে আছে, ধানমন্ডি দুই নম্বরের সেই এল প্যাটার্নের বাড়িটায় একের পর এক সিনেমা দেখেছি। সেখানেই একবার সত্যজিৎ রায় রেট্রোসপেকটিভ হলো। ওয়াহিদুল হক অতিথি হয়ে এসে বলেছিলেন, ‘সত্যজিৎ রায়ের সবচেয়ে বড় গুণ হলো, তিনি ঠিক জায়গায় থামতে জানেন।’ এ কথা আমার খুব মনে আছে। ভারত বিচিত্রায় এই বিষয়টি নিয়ে একটি ফিচার লিখেছিলাম, মনে পড়ে।

‘হীরক রাজার দেশে’ ছবিটি এসেছিল এরশাদ আমলে, কোনো এক চলচ্চিত্র উৎসবে। আনন্দ সিনেমা হলে সে ছবি দেখার জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু মিসকমিউনিকেশনের কারণে টিকিট পাইনি। খুব মন খারাপ হয়েছিল। তবে কিছুদিনের মধ্যেই টেলিভিশনে দেখেছিলাম সে ছবি। আমাদের বড় ভাইয়ের বন্ধু আজাদ ভাই পুরো সিনেমাটাই স্টেরিওতে ক্যাসেটবন্দি করেছিলেন। মাঝে মাঝেই সে ক্যাসেট শুনতাম আমরা। এবং হ্যাঁ, পুরো সিনেমাটাই আমাদের মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল। আমাদের মতো অসংখ্য মানুষের মুখস্ত ছিল সংলাপগুলো। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ‘দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান’ শ্লোগানটার ব্যবহার ছিল সে সময়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ