কোটা আন্দোলনে পুলিশের গুলি, দৃষ্টির সঙ্গে স্বপ্নও ঝাপসা জাবি ছাত্রের

আনোয়ার আজমী, বিশেষ প্রতিবেদক, এবিসিনিউজবিডি,
ঢাকা (৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮) : বাঁ চোখে এখনো ঝাপসা দেখেন আরেফিন শেখ। আর ডান চোখ চুলকায়, জ্বালাপোড়া করে। দুই চোখে দৃষ্টির ভারসাম্য না থাকায় হাঁটার সময় হোঁচট খান তিনি। যে কারণে তাঁর স্বাভাবিক চলাফেরা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। চোখের সমস্যার কারণে পিছিয়ে পড়ছেন শিক্ষাজীবনেও। কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত থাকা আরেফিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ৯ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ডেইরি গেটে সড়ক অবরোধ করেছিলেন। সেদিনের কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন আরেফিনও। পুলিশ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছোড়ে। শটগানের স্প্লিন্টার এসে বিঁধে আরেফিনের চোখে-মুখে। বাঁ চোখে একটি স্প্লিন্টার ঢুকে যায়। স্প্লিন্টারের আঘাত লাগে ডান চোখে। বাঁ চোখে একবার অস্ত্রোপচার হলেও স্প্রিন্টার বের করা যায়নি।

২০ সেপ্টেম্বর থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা শুরু হয়েছে। কিন্তু চোখের সমস্যার কারণে পরীক্ষা দিতে পারছেন না আরেফিন। ঢাকায় চিকিৎসা শেষে গ্রামের বাড়িতেই থাকছেন তিনি।

দুই ভাইবোনের মধ্যে আরেফিন বড়। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক দুটো পরীক্ষাতেই এ প্লাস পেয়েছিলেন। ছাত্র পড়িয়ে (টিউশনি) পড়ালেখার খরচ চালান তিনি। তাঁরা বাবা একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। তাঁদের বাড়ি নড়াইলের মহিলখোলায়।

আরেফিন যেদিন আহত হন, সেদিন তাঁর বিভাগে নবীনবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক একটি নাটক মঞ্চায়ন করা হয়। নাটকের একটি চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। অনুষ্ঠান শেষ করে যোগ দেন আন্দোলনে। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক শাকিল উজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ অতর্কিতে তাদের ওপর হামলা চালায়। আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮ থেকে ৯ জনকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। আরেফিনের অবস্থাই ছিল গুরুতর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ