পদ্মায় দ্বিতীয় স্প্যান বসতে পারে কাল

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: দিনের আলো কমে বেলা শেষ হয়ে যাওয়ায় পদ্মা সেতুর দ্বিতীয় স্প্যান বসানো সম্ভব হয়নি। আগামীকাল বেলা একটার মধ্যে সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩৮ ও ৩৯ নম্বর খুঁটির ওপর ১৫০ মিটার দীর্ঘ এই স্প্যান বসানো হতে পারে। স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর ৩০০ মিটার দৃশ্যমান হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পদ্মা সেতু প্রকল্পের (মূল সেতুর) এক উপসহকারী প্রকৌশলী জানান, তিন হাজার ২০০ টন ওজনের স্প্যান নিয়ে ক্রেনটি বেলা ১১টার দিকে খুঁটির কাছে পৌঁছায়। তবে স্প্যান বসানোর আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করতে বিকেল হয়ে যায়। তখন স্প্যানটি খুঁটির স্থাপন করতে আরও পাঁচ ঘণ্টা প্রয়োজন ছিল। তাই খুঁটির ওপর স্প্যান ওঠানোর কার্যক্রম বিকেল চারটার দিকে বন্ধ করা হয়। রোববার সকাল থেকে আবারও এই কাজ শুরু হবে। এদিন দুপুর একটার মধ্যে স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন সেতু প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা।

গত ২০ জানুয়ারি বিকেলে মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে এই স্প্যান নিয়ে তিন হাজার ৮০০ টন ওজনের ক্রেনটি জাজিরা প্রান্তের দিকে রওনা দেয়। শক্তিশালী ক্রেনটি দিয়েই খুঁটির ওপর স্প্যানটি বসানো হবে। স্প্যান নিয়ে ক্রেনটির জাজিরা প্রান্তে খুঁটির কাছে পৌঁছতে তিন দিন সময় লাগার কথা। কিন্তু পদ্মা নদীতে ঘনকুয়াশা, নদীতে সেতু নির্মাণকাজে ভারী যন্ত্রাংশ থাকা এবং নদীর নাব্য সংকট থাকায় ক্রেনটি জাজিরা প্রান্তে পৌঁছায় আট দিন পর।

গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটির মধ্যে প্রথম স্প্যানটি বসানো হয়। এর চার মাস পর দ্বিতীয় স্প্যানটি বসানো হচ্ছে। এ স্প্যানটিসহ মোট ১২টি স্প্যান প্রস্তুত হয়ে আছে মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে। এর মধ্যে দুটি স্প্যান রং করা হচ্ছে। এই দুটি স্প্যান আগামী মার্চ মাসের মধ্যে বসানো হবে। এ ছাড়া জাজিরা প্রান্তের নাওডোবায় (তীরের কাছের অংশ) ৪০ নম্বর খুঁটি স্প্যান বসানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। আর ৪১ ও ৪২ নম্বর খুঁটির ঢালাইয়ের কাজ চলছে, যা প্রস্তুত হতে আগামী জুন মাস পর্যন্ত সময় লাগবে।

সেতুতে এ রকম ৪১টি স্প্যান বসানো হবে। চীন থেকে তৈরি করে স্প্যানের অংশগুলো সমুদ্রপথে জাহাজে করে বাংলাদেশে আনা হয়। সেখান থেকে মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে নিয়ে তা ফিটিং করা হয়। আর পুরো সেতুতে মোট খুঁটি (পিলার) হবে ৪২ টি। এক খুঁটি থেকে আরেক খুঁটির দূরত্ব ১৫০ মিটার। এই দূরত্বের লম্বা ইস্পাতের কাঠামো বা স্প্যান জোড়া দিয়েই সেতু নির্মিত হবে।

পদ্মা সেতুর প্রতিটি খুঁটির নিচে ছয়টি করে পাইল বসানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে পাইলের সংখ্যা ২৪০টি। ইস্পাতের এসব পাইল মাটির নিচে ৯৬ থেকে ১২৮ মিটার পর্যন্ত গভীরে বসানো হচ্ছে।

২০১৪ সালের ১৮ জুন মূল সেতু নির্মাণে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করে সরকার। আর নদীশাসনের কাজ করছে চীনেরই আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন।

দ্বিতলবিশিষ্ট পদ্মা সেতু হচ্ছে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটি প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। খুঁটির ওপর ইস্পাতের যে স্প্যান বসানো হবে, এর ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। আর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ