নেপালের টিকিটে হংকং !

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: সাড়ে চার লাখ টাকা খরচা করে হংকং যাওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন মামুনুর রশীদ। যেতে হবে নেপাল ঘুরে। হংকংয়ে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার এমন স্বপ্ন দেখান তানভীর আহম্মেদ নামের ব্যক্তিটি। কিন্তু মামুনুর রশীদ যেদিন রওনা হবেন, সেদিনই তানভীর হাওয়া। তবে পার পাননি তিনি। আটকা পড়েছেন পুলিশের হাতে। এখন আছেন সিআইডির জিম্মায়।

পত্রিকায় লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে আকৃষ্ট হন মামুনুর রশীদ। চাকরি-বাকরি নেই। হংকং যেতে পারলে শুধু টাকা আর টাকা। বিজ্ঞাপনদাতা তানভীর আহম্মেদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তানভীর মুখ ভরে বলেন, হংকংয়ে পাঁচ তারকা হোটেল আর বেকারি আছে তাঁর। এসব প্রতিষ্ঠান কর্মচারী প্রয়োজন।

ভিসাপ্রক্রিয়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকায় হংকংয়ে নিতে পারবেন বলেন মামুনুরকে।

টাকা পেয়ে মামুনুরকে বলা হয়, নেপাল হয়ে যেতে হবে হংকংয়ে। তাঁকে পাসপোর্ট-ভিসা সব দেওয়া হবে বিমানবন্দরে। কিন্তু যাত্রার দিন আর দেখা মেলেনি তানভীরের। নেপাল কিংবা হংকং—কোথাও যাওয়া সম্ভব হয়নি মামুনুরের। বাধ্য হয়ে তাই বাড়ি ফিরে আসতে হয় তাঁকে।

মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমি যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছিলাম, সেটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে তানভীরের সঙ্গে গত সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে যোগাযোগ করি। প্রতিবারই যমুনা ফিউচার পার্কে তিনি আমার সঙ্গে দেখা করতেন। ১৭ সেপ্টেম্বর আমাকে হংকং পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু নেপাল থেকে ভিসা নিতে হবে। এ কথা বলে আমার কাছ থেকে ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা নেন তানভীর। কাঠমান্ডু রুটে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের টিকিট দেন তিনি। কিন্তু টাকা-পাসপোর্ট নিয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর আর তানভীরের দেখা পাইনি। তাঁর মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। পরে থানায় মামলা করি।’

একই কৌশলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জিয়াউল ইসলাম ও হায়াত আহমেদের কাছ থেকে সাত লাখ টাকা নিয়ে বিমানবন্দর থেকে কৌশলে গা-ঢাকা দেন তানভীর।

জিয়াউল ইসলাম, হায়াত, মামুনুর রশীদের মতো আরও অনেক ব্যক্তিকে এভাবে হংকংয়ে পাঠানো কথা বলে সর্বস্বান্ত করেছেন তানভীর আহম্মেদ। নিজেকে তিনি সাবেক সেনা কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন। এ ধরনের প্রতারণায় তাঁর সহযোগী ছিলেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান ওরফে সুমন নামের এক যুবক।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকা থেকে তানভীরকে ও খিলক্ষেতের নামাপাড়া থেকে সুমনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে এই দুই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম। আজ শনিবার মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ২০০০ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগ দেন তানভীর। কিন্তু প্রশিক্ষণের সময়ই বাদ পড়েন তিনি। পাঁচ বছর ধরে এভাবে প্রতারণা করে আসছিলেন তানভীর। ১৯ লাখ টাকা পাওয়ায় সিআইডির আবেদনে তাঁর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে।

তানভীরের সহযোগী সুমন একই অভিযোগে এর আগে একবার গ্রেপ্তার হন। জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও একই ধরনের প্রতারণা শুরু করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ