কার স্বার্থে আরসার হামলা !

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: চুক্তি সইয়ের দুই মাসের মাথায় প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া শুরুকে সামনে রেখে কাজ করছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। এরই ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবাসনের মাঠ পর্যায়ের চুক্তি চূড়ান্ত করতে ১৫ জানুয়ারি নেপিডোতে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবেরা আলোচনায় বসছেন। এমন সময়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যদের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়েছে দ্য আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)। হামলার দুই দিন পর এর দায়ও স্বীকার করেছে গোষ্ঠীটি। আর এতেই এ প্রশ্ন ওঠা শুরু করেছে যে, কার স্বার্থে আরসার হামলা।

ঢাকা ও ইয়াঙ্গুনের সাবেক ও বর্তমান কূটনীতিকেরা বলছেন, গত এক বছরের কিছুটা বেশি সময় আগে আবির্ভাবের পর থেকেই আরসা যে সব হামলা চালিয়েছে, তাতে রোহিঙ্গাদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আরসার হামলা কার স্বার্থে তা নিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন। সর্বশেষ ওই হামলাকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া পেছানোর অজুহাত হিসাবে দাঁড় করাতে পারে মিয়ানমার।

কূটনীতিক সূত্রগুলো বলছে, রাখাইনের মংডুতে আরসার সর্বশেষ হামলার খবরটি মিয়ানমারের সেনাপ্রধান তাঁর ফেসবুক পেজে প্রচার করেছেন। রাখাইনে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার পাশাপাশি গণমাধ্যমের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেনাপ্রধানের খবরের সূত্র যাচাই করা সম্ভব নয়। ফলে এখন পর্যন্ত সেনা সূত্রের ওপর নির্ভর করেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম খবরটি প্রচার করেছে।

হামলার দু’দিন পর আরসা টুইটারে যে বিবৃতি প্রচার করেছে, সেটা নিয়েও অনেকের সন্দেহ রয়েছে। কেননা ২৫ আগস্টের ঘটনাপ্রবাহের পর থেকে রাখাইনে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় রয়েছে। সেখানে গুটিকয়েক লোকের পক্ষে সেকেলে অস্ত্র নিয়ে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে বেঁচে যাওয়া কতটা সম্ভব। তা ছাড়া পাহাড়, নদী আর সাগরে ঘেরা দুর্গম অঞ্চলে এ মুহূর্তে যে কারও চলাচল রীতিমতো অসম্ভব।

কূটনীতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করার পাশাপাশি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমীকরণ বিশেষ করে সামরিক ও বেসামরিক মহলের মধ্যে আস্থার সংকটকে কাজে লাগিয়ে একটি পক্ষ আরসাকে ইন্ধন যুগিয়ে থাকতে পারে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে আরসার সর্বশেষ হামলার প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) অনুপ কুমার চাকমা সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, রোহিঙ্গাদের রাখাইনে প্রত্যাবাসনের জন্য ১৫ জানুয়ারি ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চূড়ান্ত হওয়ার কথা। এর ঠিক ১০ দিন আগে আরসা এই হামলা কেন চালাল। ২৪ আগস্ট কফি আনান কমিশন তাদের যে প্রতিবেদন দিয়েছিল তাতে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ছিল। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পরদিন আরসা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালায়। ওই হামলার অজুহাতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু করে।

সাবেক রাষ্ট্রদূতের মতে, আরসা যেভাবে তাদের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তা রোহিঙ্গাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। চূড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানেরা। তাই আরসা কাদের হয়ে কাজ করছে সেটা খুঁজে বের করা জরুরি।

এদিকে রোববার এক টুইট বার্তায় আরসা ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে তারা লড়াই চালিয়ে যাবে।

আরসার চালানো কথিত হামলার কারণে গত বছর রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল। ওই সময় থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ পালিয়ে এসেছে।

মিয়ানমারের সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে, রাখাইনে গত শুক্রবার ২০ জন ‘চরমপন্থী বাঙালি সন্ত্রাসী’ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একটি সাঁজোয়া যানের ওপর হামলা চালায়। ওই যানে এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ওই হামলায় তিন ব্যক্তি আহত হয়।

মিয়ানমারের সরকারের দাবি, আরসা সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। তবে আরসা বলছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে তাঁরা।

বিবিসির বিশ্লেষক জোনাথন হেড বলেছেন, হামলা চালানোর কথা আরসা স্বীকার করায় এখন মিয়ানমারের সরকার আরও কঠোর অবস্থানে চলে যেতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, এই দায় স্বীকারের পর রাখাইন রাজ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ও গণমাধ্যমের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখার বিষয়ে অনড় অবস্থানে থাকবে সরকার। অন্যদিকে সরকারি বাহিনীর ওপর বাড়তে পারে সন্ত্রাসী হামলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ