রংপুরে ৮ বাড়িতে বাড়িতে আগুন

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: রংপুরের হরকলি ঠাকুরপাড়া গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে আরও ২৪ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো মাথা গোজতে আবারও নতুন করে ঘর তৈরির চেষ্টা করছেন। তবে তাঁদের আতঙ্ক কাটেনি। নিরাপত্তার জন্য আপাতত সেখানে একটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন তারা।

আজ সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার অভিজিৎ চ্যাটার্জি। তবে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। এ ছাড়া জাতীয় পাটির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল ঠাকুরপাড়া গ্রাম পরিদর্শন করে। তারা ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে ১০ হাজার করে টাকা সাহায্য দেন।

পরিদর্শন শেষে জাতীয় পার্টির মহাসচিব সাংবাদিকের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি পুরো ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে বলেছেন, ‘ঠাকুরপাড়া গ্রামে ফেসবুকের স্ট্যাটাস নিয়ে হিন্দু পরিবারের ওপর যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে তা কখনোই ক্ষমার যোগ্য নয়। আমরা এ ঘটনায় মর্মাহত। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ দেশে এ ধরনের কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না।’

রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন বলেন, গত রোববার রাত থেকে আজ ভোর পর্যন্ত ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে গ্রেপ্তারের সংখ্যা হলো ১২৪ জন। তিনি আরও বলেন, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া টিটু রায়ের এখনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাঁর সন্ধানে নারায়ণগঞ্জে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তাঁকে খোঁজা হচ্ছে।

টিটু রায়ের মা জীতেন বালা বলেছেন, ‘১০ বছর আগে ছেলে বাড়ি থেকে সেই যে চলি যায় আর একদিনও বাড়িত আইসে নাই। ছাওয়া টিটু এইগলা কইরবার পারে না।’

পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেছেন, ঘটনাস্থল ঠাকুরপাড়া গ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনুকূলে রাখতে সেখানে সার্বক্ষণিক পুলিশ রয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে নেতৃত্বদানকারীদের ভিডিও ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। অনেকেই বাড়ি থেকে পালিয়ে থাকায় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত সবাইকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতের অধিকাংশই জামাত-শিবিরের নেতা-কর্মী।

গতকাল সোমবার সকালে ঠাকুরপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসিমা জামান ঘরবাড়ি নির্মাণে তদারকি করছেন। এ ছাড়াও জাসদ (ইনু) জেলা নেতৃবৃন্দ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিটি ঘরে গিয়ে তাদের সান্ত্বনা দেন।

সকালে সরেজমিনে আরও দেখা যায়, ঘর নির্মাণে ব্যস্ত থাকলেও হিন্দু পরিবারদের ভীতি এখনো কাটেনি। পোড়ামাটির ক্ষতচিহ্ন এখনো রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য আপাতত সেখানে একটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন সেখানকার অসহায় মানুষ।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সুধীর রায় আক্ষেপ করে বলেন, ছয়টি বলদ গরু লুট করে নিয়ে গেল। তারা এখানে শুধু হামলা করতে আসেনি। ঘরবাড়ির মালামাল গরু-ছাগলও লুট করল।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের স্ট্যাটাসের জের ধরে গত শুক্রবার রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার হরকলি ঠাকুরপাড়া গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের আটটি বাড়ি পুড়িয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। তাদের নিবৃত্ত করতে পুলিশের গুলিতে হাবিবুর রহমান নামের একজন জামায়াত কর্মী নিহত হয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত নয়জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাঁদের মধ্যে মাহবুবুল (৩০) নামের একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান চিকিৎসকেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ