ডি ভিলিয়ার্স-তাণ্ডব দেখল বাংলাদেশ

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ শেষে বাংলাদেশ দল অন্তত একটি বিষয় নিয়ে গর্ব করতে পারে, আর যা–ই হোক টস জিততে তো শিখেছে দল! সফরের ধারা বজায় রেখে টানা চতুর্থ ম্যাচেও মুদ্রা নিক্ষেপে বিজয়ী বাংলাদেশ অধিনায়ক। টসে জিতে এবার বোলিং নিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তবে টস-ভাগ্যের মতোই অপরিবর্তিত বাংলাদেশের পারফরম্যান্স। অন্তত বোলিংয়ের ব্যাপারে এটা তো বলাই যায়। বাংলাদেশের বোলিং নিয়ে আবারও খেললেন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা। পার্লের বোল্যান্ড পার্কে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ডি ভিলিয়ার্স–ঝড়ে ৬ উইকেটে ৩৫৩ রান করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
বোলিংয়ের শুরুটা কিন্তু খারাপ ছিল না বাংলাদেশের। প্রথম দশ ওভারে কোনো উইকেট ফেলতে না পারলেও অন্তত রানরেট পাঁচের মধ্যে আটকে রাখতে পেরেছিলেন মাশরাফি-তাসকিন-রুবেলরা। উইকেট ও মাঠের কন্ডিশন মিলিয়ে বাউন্ডারির দিকেও বল ছুটছিল অনেক কম। কিন্তু প্রথম সাফল্য পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৮তম ওভার পর্যন্ত। সাকিব আল হাসানের পঞ্চম ওভারের তৃতীয় বলের লাইন মিস করলেন কুইন্টন ডি কক। এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে ৪৬ রান করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই ওপেনার। ৬১ বলের ইনিংসে মাত্র একটি বাউন্ডারি ছিল এই বাঁ হাতি ব্যাটসম্যানের। ক্যারিয়ারে এই প্রথম ২০ ছাড়ানো কোনো ইনিংসে একের বেশি বাউন্ডারি মারতে পারেননি কক। কক যখন ফিরলেন, তখন মনে হচ্ছিল, আজকের উইকেটটা মনে হয় বোলিং-সহায়ক। দুই বল পরেই ফাফ ডু প্লেসি বোল্ড হওয়ায় সে ধারণা আরেকটু পোক্ত হয়েছিল।
তবে সব ধরনের ‘ধারণা-তত্ত্ব’ উড়ে গেল ডি ভিলিয়ার্স-ঝড়ে। যে উইকেটে কক মাত্র একটি বাউন্ডারি মেরেছেন, হাশিম আমলাও আশি ছাড়ানো ইনিংসে মেরেছেন মাত্র ৪ বাউন্ডারি, সেখানেই একের পর এক বাউন্ডারি মেরে গেলেন ওয়ানডের দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান। এমন সব ছক্কা মারলেন, যার প্রতিটিই মাঠ পার হওয়ার ইঙ্গিত ছিল। ৩৪ বলে করলেন প্রথম ফিফটি; সেটি সেঞ্চুরিতে পরিণত করতে ডি ভিলিয়ার্সের লাগল ঠিক ৬৮ বল। তখনো দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের ১১ ওভারের বেশি বাকি। ডি ভিলিয়ার্স ডাবল সেঞ্চুরিটি পাবেন কি না, সে প্রশ্ন কিন্তু জোরের সঙ্গেই উঠেছিল।
৪৬তম ওভারেই ১৫০ (৯৩ বলে) করে ফেলার পর ব্যাপারটিকে খুব সম্ভব বলেই মনে হচ্ছিল। তাসকিনের পরের দুই বলে একটি চার ও একটি ছয় মারার পর তো দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড নিয়েই গবেষণা শুরু করে দিতে হয়েছিল। তবে গেইলের রেকর্ডটা অন্তত আজকের জন্য নিরাপদ করলেন রুবেল। ১৭৬ রানে করেই আউট হয়ে যান ডি ভিলিয়ার্স। ১৫ চার ও ৭ ছক্কার ইনিংসটির জন্য মাত্র ১০৪ বলই দরকার হয়েছে তাঁর।
অথচ ইনিংসটি ২ রানেও থেমে যেত পারত—যদি সাকিবের বলে স্লিপে দাঁড়িয়ে নাসিরের প্রতিক্রিয়াটা একটু দ্রুত হতো! তিনি বলে হাতই ছোঁয়াতে পারলেন না। দক্ষিণ আফ্রিকাও ১০০ পেরোনোর আগে তৃতীয় উইকেট হারানোর বিপর্যয় থেকে বেঁচে গেল।
ডি ভিলিয়ার্স ফেরার পর বেশ শান্তই হয়ে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং। শেষ ১৪ বলে মাত্র ১০ রান তুলেছে স্বাগতিক দল। শেষ তিন বলে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়ে একটু নাটকীয়তা এনেছিলের রুবেল। কিন্তু শেষ বলটা অল্পের জন্য স্টাম্পে লাগল না। ৬২ রান দিয়ে ৪ উইকেট পেয়েই সন্তুষ্ট হতে হলো রুবেলকে।

দক্ষিণ আফ্রিকা
  রান বল
আমলা ক মুশফিক ব রুবেল ৮৫ ৯২
ডি কক এলবিডব্লিউ ব সাকিব ৪৬ ৬১
ডু প্লেসি ব সাকিব
ডি ভিলিয়ার্স ক সাব্বির ব রুবেল ১৭৬ ১০৪ ১৫
ডুমিনি এলবিডব্লিউ ব রুবেল ৩০ ৩০
বেহারডিয়েন অপরাজিত
প্রিটোরিয়াস ক ইমরুল ব রুবেল
ফিকোয়াও অপরাজিত
অতিরিক্ত
মোট ৫০ ওভারে, ৬ উইকেটে ৩৫৩
উইকেট পতন: ১-৯০ (ডি কক, ১৭.৩), ২-৯০ (ডু প্লেসি, ১৭.৬), ৩-২২৬ (আমলা, ৩৫.৬), ৪-৩৪৩ (ডি ভিলিয়ার্স, ৪৭.৪), ৫-৩৫৩ (ডুমিনি, ৪৯.৪), ৬-৩৫৩ (প্রিটোরিয়াস, ৪৯.৫)।
বোলিং: মাশরাফি ১০-০-৮২-০ (ও ১) , তাসকিন ৯-০-৭১-০ (ও ৩), সাকিব ১০-০-৬০-২ (ও ১), নাসির ৮-০-৪৯-০, রুবেল ১০-০-৬২-৪ (ও ১), সাব্বির ১-০-১১-০, মাহমুদউল্লাহ ২-০-১৬-০ (ও ১)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ