ক্যানসারের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: ক্যানসারের চিকিৎসায় সিএআর-টি (কাইমেরিক অ্যান্টিজেন রিসিপটর থেরাপি) নামের নতুন চিকিৎসাপদ্ধতির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই পদ্ধতি রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) পুনঃসংস্কারের মাধ্যমে আক্রান্ত রোগীর ক্যানসার প্রতিরোধ করবে।

এ সিদ্ধান্ত ‘ঐতিহাসিক’ উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থা খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন বলেছে, এ পদ্ধতি ক্যানসারের চিকিৎসার অগ্রগতির ‘নতুন পর্যায়ে প্রবেশ’ করল।

যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকেরা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত ক্যানসারের চিকিৎসাপদ্ধতি একটি ‘উত্তেজনাপূর্ণ পর্যায়ে’ উন্নীত হলো।

এ চিকিৎসাপদ্ধতি ‘জীবন্ত ওষুধ’ থেরাপি নামে পরিচিত। এ থেরাপির মাধ্যমে একধরনের ব্ল্যাড ক্যানসারে আক্রান্ত ৮৩ শতাংশ রোগীর সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ সম্ভব।

এটি ক্যানসারের প্রচলিত চিকিৎসাপদ্ধতি, যেমন অস্ত্রোপচার বা কেমোথেরাপির মতো নয়। প্রত্যেক রোগীর জন্য আলাদাভাবে এই ‘জীবন্ত ওষুধ’ তৈরি করা হয়। রোগীর শ্বেত রক্তকণিকা সংগ্রহ করে এই জীবন্ত ওষুধ বা সিএআর-টি তৈরি করা হয়।

রোগী থেকে সংগ্রহ করা শ্বেত রক্তকণিকার জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে তা রোগীর শরীরে পুনরায় প্রবেশ করানো হয়, যাতে তা ক্যানসারকে আক্রমণ করতে পারে। এই ‘ক্যানসার কিলার’ যখন তাদের শিকার (ক্যানসার কোষ) খুঁজে পায়, তখন তাকে আক্রমণ করে এবং এই ক্যানসার কিলার তার বিস্তার ঘটাতে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের স্কট গটলিয়েব বলেন, ‘ভয়ংকর ক্যানসার প্রতিরোধে রোগীর নিজের কোষগুলো পুনঃসংস্কার করার সক্ষমতা অর্জনের মধ্য দিয়ে আমরা উদ্ভাবনী চিকিৎসায় নতুন দিগন্তে প্রবেশ করছি।’

ফিলাডেলফিয়ার শিশু হাসপাতালে ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসায় সিএআর-টি পদ্ধতি প্রথম ব্যবহার করেন চিকিৎসক স্টেফান গ্রুপ। তিনি বলেন, নতুন এই উদ্যোগ ‘অত্যন্ত আগ্রহদ্দৌপক’। ক্যানসারের এ ধরনের কার্যকর পদ্ধতি আমরা আগে কখনো দেখিনি।’

প্রথম যে রোগীর ক্ষেত্র সিএআর-টি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, সেই রোগী মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিলেন। বর্তমানে পাঁচ বছর ধরে তিনি ক্যানসারমুক্ত রয়েছেন। এ পর্যন্ত এই থেরাপি দেওয়া হয়েছে ৬৩ জন রোগীকে। এই রোগীদের ৮৩ শতাংশই থেরাপি দেওয়ার তিন মাসের মধ্যে পুরোপুরি আরোগ্য লাভ করেন। দীর্ঘ মেয়াদে এর প্রভাব সম্পর্কিত তথ্য এখনো সংগ্রহ করা হচ্ছে।

যদিও এই থেরাপি পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত নয়। সিএআর-টি কোষগুলো রোগীর শরীরে দ্রুত বিস্তার ঘটায়। এ কারণ প্রাণঘাতী ‘সাইটোকিন রিলিজ সিনড্রোম’ দেখা দিতে পারে। তবে ওষুধের মাধ্যমে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

প্রাথমিকভাবে এক প্রকারের ক্যানসার নিরাময়ে সিএআরটি প্রযুক্তি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করলেও চিকিৎসকেরা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, এই প্রযুক্তি শিগগিরই নানা ধরনের ক্যানসার নিরাময়ে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।

ফ্রেড হাচিনসন ক্যানসার রিসার্চ সেন্টারের সেলুলার ইমিউনোথেরাপি বিষয়ের পরিচালক ডেভিড ম্যালোনি বলেন, খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের সিদ্ধান্তটি ‘যুগান্তকারী’। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এই প্রযুক্তি শিগগিরই নানা ধরনের ক্যানসারের চিকিৎসায় অনেক নতুন ধরনের ইমিউনোথেরাপি-ভিত্তিক চিকিৎসার দুয়ার উন্মোচন করবে।’

সিএআর-টি প্রযুক্তি নানা ধরনের রক্তভিত্তিক ক্যানসার নিরাময়ের জন্য কার্যকর বলে বিবেচিত। অন্য ক্যানসার নিরাময়ে এই প্রযুক্তি এখনো কার্যকর নয়। কলম্বিয়া মেডিকেল ইউনিভার্সিটির পেডিয়াট্রিক অনকোলজিস্ট প্রকাশ সত্যানি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, নিকট ভবিষ্যতেই এই প্রযুক্তির আরও উন্নতি ঘটবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ