নাসিরপুরের আস্তানায় ৭–৮ জনের ছিন্নভিন্ন দেহ

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: মৌলভীবাজারের নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানা ঘিরে পরিচালিত ‘অপারেশন হিটব্যাক’ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এ অভিযানে সাত থেকে আটজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানার অভিযান শেষ হয়। বিকেল পাঁচটার দিকে ঘটনাস্থলের কাছে ১নং খলিলপুর ইউনিয়ন কমপ্লেক্স ভবনে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান এ তথ্য জানান।

মনিরুল ইসলাম বলেন, অভিযান শেষে ওই ভবনের ভেতরে ঢুকে তাঁরা দেখেন যে মানবদেহের ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এসব অংশ দেখে মনে হয়েছে যে সাত থেকে আটজনের দেহের অংশবিশেষ হতে পারে। পুরুষ, নারী ও দু-একজন অপরিণত বয়সীর দেহের অংশবিশেষ ছিল। দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। তাদের ধারণা, যখনই জঙ্গিরা দেখেছে যে পালিয়ে যাওয়ার পথ নেই, তখন তারা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মহনন করেছে।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট প্রধান আরও বলেন, ‘আমরা একটা সূত্র ধরে কাজ করছিলাম। নিহত ব্যক্তিরা নব্য জেএমবির সদস্য, সেটা আমরা মোটামুটি নিশ্চিত।’ এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, বাসার তত্ত্বাবধায়কের তথ্যমতে ওই ভবনে নিহত ব্যক্তিরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। তবে পুলিশ সে তথ্য যাচাই-বাছাই করতে পারেনি।

সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম জানান, সিলেটে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ চলাকালে যে দুটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল, তার সূত্র ধরে মৌলভীবাজারের বড়হাটের জঙ্গি আস্তানার খোঁজ পাওয়া যায়। এখানে অভিযানে যাওয়া পর নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানাটির তথ্য তাদের কাছে যায়। তখন পুলিশ ওই বাড়িটিও ঘিরে ফেলে। নাসিরপুরের আস্তানাটি আত্মগোপনের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হতো বলে তিনি জানান।

নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানায় যে বিস্ফোরক পাওয়া গেছে, তার সঙ্গে অন্য স্থানে পাওয়া বিস্ফোরকের কোনো মিল আছে কি না, জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, সীতাকুণ্ড ও বিমানবন্দর সড়কের গোলচত্বর এলাকায় আত্মঘাতী যুবকের কাছে যে অবিস্ফোরিত বোমা পাওয়া গিয়েছিল, সেগুলোর সঙ্গে এসব বিস্ফোরকের মিল পাওয়া গেছে।

নাসিরপুরের এ আস্তানার বাসিন্দারা স্থানীয় কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, এরা স্থানীয় নয়। কারও সঙ্গে মিশত না।

ব্রিফিংয়ে অন্যদের মধ্যে ছিলেন মৌলভীবাজারের এসপি মোহাম্মদ শাহজালাল, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কামরুল আহসান, কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের ডিসি প্রলয় কুমার জোয়ার্দার, সিলেটের অতিরিক্ত ডিআইজি নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

‘অপারেশন হিটব্যাক’ শেষ হওয়ার পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থলে গেছে আলামত সংগ্রহের জন্য।

২৮ মার্চ দিবাগত রাত ও ২৯ মার্চ বুধবার ভোরে মৌলভীবাজারের পৃথক দুটি স্থানে দুটি বাড়ি জঙ্গি আস্তানা হিসেবে শনাক্ত করে ঘিরে রাখে পুলিশ। একটি বাড়ি মৌলভীবাজার শহরের বড়হাট আবুশাহ দাখিল মাদ্রাসা গলিতে অবস্থিত। অন্য বাড়িটির অবস্থান শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে নাসিরপুর গ্রামে। রাতের বিরতি ও আজ সকালের বৈরী আবহাওয়ার কারণে নাসিরপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে ছেদ পড়ে। আবহাওয়া অনুকূলে এলে দুপুর থেকে নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানায় ফের অভিযান শুরু হয়।

এর আগে আজ বেলা ১১টার দিকে মৌলভীবাজারের বড়হাটে জঙ্গি আস্তানা এলাকায় যান পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শেষ করার পর বড়হাটের জঙ্গি আস্তানায় অভিযান পুরোদমে শুরু করা হবে। তিনি তখন আরও বলেন, ‘মৌলভীবাজারের দুটি জঙ্গি আস্তানায় গতকাল বুধবার যে অভিযান শুরু হয়েছিল, বৈরী আবহাওয়ার কারণে আজ সকালে তা শুরু করা যায়নি। এখন নাসিরপুরে (ফতেহপুর) অভিযান শেষ করে আমরা বড়হাটে অভিযান শুরু করব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ