দাম্পত্য কলহের জেরেই দুই সন্তানকে হত্যার পর আত্মহত্যা

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: রাজধানীর মিরপুরের দারুসসালাম থানার দিয়াবাড়ি এলাকায় দুই সন্তানকে গলা কেটে হত্যার পরে মায়ের আত্মহত্যার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। এ ঘটনায় নিহত অনিকা ও তার দুই সন্তান শামিমা ও আবদুল্লাহর লাশ এখন রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে।

এ ঘটনায় নিহতের স্বামী মো. শামিম হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়েছে পুলিশ। গতকাল ঠান্ডা ভাত খেতে দেওয়ায় স্ত্রী অনিকার সঙ্গে বাক বিতণ্ডা হয় শামিমের। সে কলহের সূত্র ধরেই অনিকা এই কাজ করতে পারে বলে পুলিশকে জানিয়েছে শামিম।

দারুসসালাম থানার উপপরিদর্শক নওশের আলী বলেন, ‘তিনজনের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। নিহত অনিকাসহ শামিমের পরিবারের লোকজনদের খবর দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা ঢাকায় আসতে শুরু করেছে। নিহত অনিকার মা এলে এ ঘটনায় মামলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।’

দারুসসালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেলিমুজ্জামান বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার রাতে আমরা শামিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় এনেছি। শামিম আমাদেরকে বলেছে, সে স্থানীয় একটি সেলুনে নরসুন্দরের কাজ করে। গতকাল সকালে সে সেলুনে যাওয়া সময়ে অনিকা তাকে বাসি ভাত গরম করে এবং একটি ডিম ভেজে দেয়। কিন্তু শামিম ঠান্ডা ভাত খেতে না চাওয়ায় তার সঙ্গে অনিকার বাক বিতণ্ডা হয়। সে কারণে অনিকা এই কাজ করতে পারে বলে শামিম ধারণা করছে।’

আটক শামিম হোসেনের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর থানার ভাবড়াশুড় গ্রামে। অন্যদিকে নিহত অনিকার বাড়ি নওগাঁ জেলার মহাদেবপুরে। প্রায় সাত আট বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। দুই সন্তানকে নিয়ে এই দম্পতি বেশকিছুদিন আগে ছোট দিয়াবাড়ির পানির পাম্পের কাছের ২৯/১ নম্বর টিনসেট বাড়িতে ভাড়া ওঠেন।

পুলিশের ধারণা নিহত অনিকার কাছে পাওয়া চিরকুটটা তার হাতেরই লেখা। তবে তাদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ময়না তদন্ত প্রতিবেদন ও আরো ব্যাপক তদন্ত করার পরে জানা যাবে। তবে অনিকা তার লেখা চিরকুটে বলে গেছেন তাদের মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ি নন। কিন্তু অভাব অনটনের কারণেও এই ঘটনা ঘটতে পারে।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে শামিম তার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে এই বাড়িতে ভাড়া আছেন। প্রতিমাসের ভাড়া দুই হাজার তিনশ টাকা। প্রায় সাত মাসের ১৫ হাজার আটশ টাকা বাড়ির মালিকের পাওনা রয়েছে শামিমের কাছে। সেলুন থেকে প্রতিদিন শামিম প্রায় পাঁচশ টাকার মত আয় করে। সেলুন ভাড়া প্রতিমাসে তিন হাজার টাকা পরিশোধ করতে হতো শামিমকে। বাকি টাকায় সংসার পরিচালনা করা তাদের পক্ষে বেশকষ্টসাধ্য ছিল।

প্রসঙ্গত, ১০ জানুয়ারি দুপুরে রাজধানীর দারুসসালামের ছোট দিয়াড়ির ২৯/১ নম্বর টিনসেট বাড়ির একটি কক্ষ থেকে দুই সন্তানের গলাকাটা লাশসহ এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ