যে দৃশ্যে নায়িকা নিজেকে ধর্ষিতা মনে করেছিলেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: ৪৪ বছর আগের চলচ্চিত্র ‘লাস্ট ট্যাংগো ইন প্যারিস’। মুক্তির পর ছবিটি ব্যাপকভাবে আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছিল। এত বছর পর আবারও আলোচনায় এসেছে ছবিটি। হঠাৎ করেই ওই ছবির নায়িকা মারিয়া স্নাইদারের পুরোনো একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় নতুন করে এ আলোচনা। নায়িকা সাক্ষাৎকারটিতে বলেছিলেন, চলচ্চিত্রটির একটি দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে তিনি নিজেকে ধর্ষিতা মনে করেছিলেন।

ছবিটির গল্প মধ্যবয়সী এক পুরুষ ও এক তরুণীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। স্ত্রীর আত্মহত্যার পর মার্কিন এই হোটেল ব্যবসায়ী ফরাসি তরুণীটির সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ান। তবে তারা পরস্পরের পরিচয় ও তথ্যাদি গোপন রাখেন। একদিন ওই ব্যক্তি তরুণীটিকে বাড়ি ফেলে চলে যান। পরে তাদের হঠাৎ দেখা হলে ট্যাংগো নামের এক পানশালায় গিয়ে বসেন। লোকটি তখন মেয়েটিকে নিজের পরিচয় ও জীবনের নানা কথা জানিয়ে বলেন, তিনি মেয়েটির প্রেমে পড়েছেন। কিন্তু মেয়েটি তার সঙ্গে আর সম্পর্কে জড়াতে চাননি। কিন্তু লোকটি মরিয়া হয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইলে একপর্যায়ে ওই তরুণীর বাড়িতে তারই গুলিতে লোকটির মৃত্যু হয়। মেয়েটি তখন পুলিশের সামনে বলার জন্য মহড়া দিতে থাকেন, এই লোককে তিনি চেনেন না। তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে তিনি নিজেকে বাঁচাতে এমনটা করেছেন।

যৌন সব দৃশ্যের জন্য ছবিটি ওই সময় আলোচিত-সমালোচিত হয়েছিল। অস্কারের জন্য মনোনীত হন ইতালীয় পরিচালক বের্নার্দো বেরতোলুসি ও নায়ক মার্লোন ব্র্যান্ডো। ছবিটিতে অভিনয়ের সময় মার্লোনের বয়স ছিল ৪৮ বছর। পরিচিতি পান নায়িকা মারিয়া স্নাইদারও। মাত্র ১৯ বছরের তরুণী হিসেবে তিনি ওই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন।

২০০৭ সালে মারিয়া এক সাক্ষাৎকারে ‘লাস্ট টাংগো ইন প্যারিস’ চলচ্চিত্র নিয়ে বিস্ফোরক কিছু তথ্য দেন। তিনি বলেন, চলচ্চিত্রে তরুণীটির বাড়িতে গিয়ে লোকটির যৌন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টার বিষয়টি মূল চিত্রনাট্যে ছিল না। শুটিংয়ের সকালে হঠাৎ করেই পরিচালক ও নায়ক মিলে দৃশ্যটি যুক্ত করেন। শুটিংয়ের ঠিক আগমুহূর্তে তাঁকে বিষয়টি জানানো হয়। তিনি তখন খুব রেগে যান। রেগে গিয়ে নিজের এজেন্ট ও আইনজীবীকে ডাকতে চান। তখন নায়ক মার্লোন ব্র্যান্ডো তাঁকে বলেন, ‘এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। এটা শুধুই একটা চলচ্চিত্রের দৃশ্য।’ কিন্তু তিনি যখন এই দৃশ্যটি করতে যান, তখন নিজেকে তাঁর খুবই লাঞ্ছিত মনে হচ্ছিল। ভীষণ কেঁদেছিলেন তিনি। তাঁর ভাষায়, ‘সত্যি বলতে, আমার মনে হচ্ছিল, আমি ধর্ষণের শিকার হয়েছি; নায়ক ও পরিচালকের দ্বারা।’

মারিয়া স্নাইদারের এমন বক্তব্যের জবাবে ২০১৩ সালের এক সাক্ষাৎকারে পরিচালক বের্নার্দো বেরতোলুসিও স্বীকার করেছিলেন, চিত্রনাট্যে এমনটা ছিল না। সকালে তিনি ও মার্লোন ব্র্যান্ডো মিলে চিন্তা করে এমনটা করেন। বাস্তবসম্মত করার জন্য ছিল এই দৃশ্য সংযোজন। কারণ, তিনি মারিয়াকে ওই দৃশ্যে অভিনেত্রী নন, একজন তরুণী হিসেবে দেখাতে চেয়েছিলেন, যিনি জোরপূর্বক সম্পর্কে যন্ত্রণাটা যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারবেন।

এবিসি নিউজের খবরে বলা হয়েছে, পরিচালক যা-ই বলুন না কেন, মারিয়ার জীবনে ঘটনাটা এত সহজে ভোলার ছিল না। তিনি হতাশ বোধ করতেন। তাঁর এক আত্মীয় জানিয়েছিলেন, তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। রোগে ভুগে ২০১১ সালে মারা যান মারিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ