বিটিআরসিতে তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের প্রস্তাব

প্রযুক্তি রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ  গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের মূল্যহার, সর্বনিন্ম গতি ও ব্যবহারবিধি অবিলম্বে ঘোষণা ও বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে প্রস্তাব করেছে তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলন। ২০ হাজারেরও বেশি গ্রাহক ও সচেতন নাগরিকদের মতামত প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের মূল্যহার প্রতি মেগাবাইট ১০ পয়সা এবং প্রতি গিগাবাইট ১০ টাকা হারে এবং সর্বনিন্ম গতি ৫১২ কিলোবাইট ঘোষণা ও বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের সমন্বয়ক জুলীয়াস চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রস্তাবপত্রটি  বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় বিটিআরসির গ্রহণ ও প্রেরণ শাখায় জমা দেয়া হয়।

এর আগে গত বুধবার বেলা সাড়ে ১২টায় বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিস ডিভিশনের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম মাওলা ভুইয়া তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠককালে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের মূল্যহার নির্ধারণে লিখিত প্রস্তাব চান।

চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের নিন্ম গতি ও উচ্চমূল্য বিরাজ করছে। ইন্টারনেটের নিম্নগতি এবং উচ্চমূল্যের কারণে ইন্টারনেট নির্ভর শিক্ষা, ব্যবসা সর্বোপরি বাংলাদেশের উন্নয়ন আশংকাজনক হারে পিছিয়ে পড়ছে। ফলে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখানো প্রহসনে পরিণত হয়েছে।

দফায় দফায় ব্যান্ডউইথের মূল্য কমলেও গ্রাহক পর্যায়ে এর কোনোই প্রভাব পড়ছে না। গ্রাহকের ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ কমছে না। রক্তচোষা ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো একদিকে যেমন গলাকাটা মূল্য নিচ্ছে, অপরদিকে ইন্টারনেটের ধীরগতির জন্য কাজ করতে না পারার কারণে বায়ার হারাতে হচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ব্যাবহার করতে না দিয়ে মামদো ভুত দেশের উন্নয়নকে পিছন থেকে টেনে ধরেছে। বর্তমানে অনেক ছাত্র-ছাত্রী, তরুণ ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে প্রতিদিন বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এনে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রেখে চলেছেন। ইন্টারনেট সহজলভ্য হলে এই অগ্রযাত্রা আরো বেগবান হবে।

চিঠিতে আরো বলা হয়, প্রতি এমবিপিএস ব্যান্ডউইথের মূল্য ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা থাকাকালীন সময় থেকে গ্রামীণফোনের পি৩ প্যাকেজে ১ গিগাবাইট ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ ৫০.০০ টাকার কম। টেলিটক থ্রিজি এফ৩ প্যাকেজে গ্রাহকের ১ গিগাবাইট ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ ৩৫.০০ টাকার কম। বর্তমানে আইএসপির (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) জন্য ব্যান্ডউইথের মূল্য ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৪ হাজার ৮০০ টাকা করা হয়েছে।

গ্রামীণফোন পি১ প্যাকেজে ১ গিগাবাইট ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ নিচ্ছে ২০৯৭১.৫২ টাকা। তাছাড়া আইএসপিগুলোর বেশিরভাগ প্যাকেজই প্রতারণামূলক। এই অস্বাভাবিকতা মেনে নেয়া যায় না।

তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলন গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের মূল্যহার অবিলম্বে (ফ্লাট রেট) প্রতি মেগাবাইট ১০ পয়সা এবং প্রতি গিগাবাইট ১০ টাকা হারে এবং সর্বনিন্ম স্পিড ৫১২ কিলোবাইট নির্ধারণ ও ঘোষণা করার জন্য অনুরোধ জানায়।

তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলন আরো জানায়, আইএসপিগুলো গ্রাহক পর্যায়ে দুটি মাত্র প্যাকেজ বিক্রয় করতে পারবে। একটি ১ মেগাবাইট স্লাবে অন্যটি ১ গিগাবাইট স্লাবে। আইএসপিগুলো তাদের ব্যবসার প্রসার ও প্রতিযোগিতা করবে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক, সর্বার্ধিক গতি, নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ, সহজ ব্যবহার ও উন্নত গ্রাহক সেবার মাধ্যমে।

গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের মূল্যহার নির্ধারণে গ্রাহকদের প্রস্তাব ও মতামত বিশ্লেষণের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে পাওয়া যাচ্ছেঃ www.facebook.com/ICTmovement

প্রসঙ্গতঃ তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলন সাংবাদিক সম্মেলন করে ইন্টারনেট ব্যবহারের উপযুক্ত মূল্যহার নির্ধারণ করে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) ১২ জুন পর্যন্ত সময় বেধে দেয়। এ সময়ের মধ্যে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের মূল্যহার বিটিআরসি কর্তৃক প্রতি মেগাবাইট ১০ পয়সা এবং প্রতি গিগাবাইট ১০ টাকা হারে এবং সর্বনিম্ন গতি নির্ধারণ করে দেয় না হলে আগামী ১২ জুন ২০১৩ খৃঃ বুধবার, বিকেল ৩টা থেকে বিটিআরসি কার্যালয়ে লাগাতার গণঅবস্থানের প্রস্তুতি নিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলন।

ইতিমধ্যে বিশ কিছু সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবি ও ছাত্র সংগঠন তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ