ভুয়া সনদে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনে সুলতান মাহমুদ

Sultan Mahmud সুলতান মাহমুদসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ কর কমিশনার সুলতান মাহমুদ মুক্তিযোদ্ধা বটে! আবার সরকার কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা হিসেবে চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির সুযোগটাও কাজে লাগিয়েছেন সুবিধামতোই। এখানেই শেষ নয়; মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের নির্বাচনে হেলাল-মতিন পরিষদের পক্ষে লড়ছেন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রার্থী হিসেবে। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ থাকলেও অদৃশ্য কারণে ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট দফতর। জানা গেছে, সুলতান মাহমুদের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চনপুর পূর্ববিঘা গ্রামে। তার বাবা আলী আহমেদ মজুমদারের সৎ ব্যক্তি হিসেবে বিশেষ পরিচিত থাকলেও সন্তানের মিথ্যাচারিতার কারণে মাঝেমধ্যেই বিতর্কিত হয়েছেন বোদ্ধামহলে। কারণ সুলতান মাহমুদ নিজেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিলেও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মূলত তিনি ছিলেন দশম শ্রেণীর ছাত্র। ১৯৮৪ সালে বিসিএস পাশ করা এই সরকারি কর্মকর্তার জন্ম ১৯৫৬ সালের ৫ আগস্ট। ১৯৭১ সালে তার বাবা আলী আহমেদ মজুমদারের চাকরিসূত্রে বসবাস করতেন মাইজদীতে। আর সুলতান মাহমুদ নিজেকে পরিচয় দেন রামগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। তবে কোন সেক্টরে, কোন কমান্ডারের অধীনে কিভাবেই বা যুদ্ধ করেছেন এসবের কোনো সদুত্তর নেই সুলতান মাহমুদের কাছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সালে সরকার যখন মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়স দু’বছর বৃদ্ধির আদেশ জারি করে সে সময় সার্টিফিকেট যোগাড় করে সুযোগটিকে বিশেষভাবে কাজে লাগান সুলতান মাহমুদ। নিজে ইনকাম ট্যাক্সের কমিশনার হওয়ার সুবাদে বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেটটি ক্রয় করেন লক্ষ্মীপুর রামগঞ্জের মেয়র বেলাল ও মু্ক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বাচ্চুর মাধ্যমে। স্বাভাবিক নিয়মে সুলতান মাহমুদের চাকরির বয়সসীমা (পিআরএল) শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালের ৪ আগস্ট। কিন্তু ভুয়া সার্টিফিকেটের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিয়ে অনৈতিক সুবিধা বাগিয়ে নেওয়ায় তার চাকরির বয়স শেষ হবে ২০১৫ সালের ৪ আগস্ট। রামগঞ্জবাসী জানান, সুলতান মাহমুদ শুধু নিজেই টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট ক্রয় করেননি। তার টাকায় সরকারের রাজস্ব বিভাগের আরও তিন কর্মকর্তার সার্টিফিকেটও সংগ্রহ হয়েছে। কারণ সুলতান মাহমুদের কালো টাকার উৎস সম্পর্কে যেমন ওয়াকিবহাল তার দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তেমনি রামগঞ্জ তথা লক্ষ্মীপুরের অনেকেই জানেন এসব অবৈধ অর্থের সন্ধান। ২০১০ সালে যখন মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো হয় তখন সুলতান মাহমুদের পোস্টিং ছিল চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-৩ এ। ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম থেকে বদলি হয়ে ঢাকার সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর অঞ্চল-১০ এ যোগ দেন কর কমিশনার হিসেবে। তবে এখন নিজের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদটি বৈধ করতেই মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের হেলাল-মতিন পরিষদে সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে লড়ছেন এই কর কমিশনার। রামগঞ্জের একাধিক মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুলতান মাহমুদের সার্টিফিকেটে প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর নেই। এমনকি মুক্তিবার্তায়ও তার নাম লিপিবদ্ধ নেই। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যাদের নাম গেজেটভূক্ত হয়েছিল সেখানেও খুঁজে পাওয়া যায়নি সুলতান মাহমুদের নাম। রাজস্ব সংক্রান্ত দুর্নীতি প্রতিরোধ সংস্থার পক্ষ থেকে সনদ জালিয়াতির এ ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে জানালেও অজ্ঞাত কারণে সুলতান মাহমুদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুরের বাচ্চু কমান্ডার এবিসি নিউজ বিডিকে জানান, এটি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র। একটি পক্ষ সুলতান মাহমুদের সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য সাংবাদিকদের ভুল তথ্য দিয়েছেন। এ সময় জালিয়াতি বিভিন্ন প্রমাণ দেখালে তিনি নির্বাচনের পর সরাসরি দেখা করলে উত্তর দেবেন বলে জানান। সুলতান মাহমুদ সর্ম্পকে জানতে চাইলে কমান্ডার বাচ্চু জানান, এই মুহূর্তে তিনি নির্বাচনী জনসংযোগে ব্যস্ত থাকায় কথা বলতে পারবেন না। এ বিষয়ে সুলতান মাহমুদকে (০১৭৩১-৮০৫২৩৪) ফোন করে পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ