সরকারের লোকসান ৩০ হাজার কোটি টাকা

orion group ওরিয়ন গ্রুপসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ ওরিয়ন গ্রুপকে বর্ধিত মূল্যে আরও ৩টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দেওয়া হচ্ছে। এতে বছরে সরকারের লোকসান হবে ২ হাজার ৪১ কোটি টাকা।

দেশীয় অনভিজ্ঞ এই কোম্পানিটিকে আগে ৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র দেওয়া হয়েছে। সেখানে যে দর দেওয়া হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি দরে নতুন তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি করতে যাচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব আনোয়ার হোসেন জানান, ওরিয়নকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা তারিখ দিলেই চুক্তি সম্পাদন করা হবে।

পিডিবি আগের তিনটি থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনবে ৩.৮২ টাকা দরে। আর চুক্তির অপেক্ষায় থাকা নতুন তিনটির দর ধরা হয়েছে ৫.৭৯ টাকা। ১৫ বছর মেয়াদী এই চুক্তির ফলে বছরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ২ হাজার ৪১ কোটি টাকা লোকসান হবে।

আগের দেওয়া তিনটি কেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে ১ হাজার ৮৮ মেগাওয়াট (খুলনায় দু’টি ২৮৩ করে ও মংলারটি ৫২২ মেগাওয়াট)।

অন্যদিকে প্রক্রিয়াধীন থাকা নতুন ৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের (ঢাকা ২৮২, ৬৩৫ ও চট্টগ্রাম ২৮২ মেগাওয়াট) উৎপাদন ক্ষমতা ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৯৯শ’ মেগাওয়াট। প্রতি ইউনিটে বিদ্যুতের দর ধরা হয়েছে ৫.৭৯ টাকা। এতে প্রতি ইউনিটে বাড়তি মূল্য দিতে হবে ১.৯৭ টাকা।

কয়লাভিত্তিক নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র ৩টি বছরে ১ হাজার ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। সে হিসেবে বছরে আগের ৩টির চেয়ে প্রায় ২ হাজার ৪১ কোটি টাকা বাড়তি পরিশোধ করতে হবে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার সেল-১ সূত্র জানিয়েছে, ওরিয়ন গ্রুপের আগের তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র খুলনা ২৮৩ মেগাওয়াট থেকে ৪.৪৯ সেন্ট, চট্টগ্রাম ২৮৩ মেগাওয়াট  থেকে ৪.৫০ সেন্ট ও মাওয়া ৫২২ মেগাওয়াট থেকে ৪.৮৩ সেন্ট দরে বিদ্যুৎ কিনবে। সব মিলিয়ে গড় দর দাঁড়ায় ৪.৬১ সেন্ট। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩.৮২ টাকা (ইউএস ডলার ৮৩ টাকা) দাঁড়ায়।

আর চুক্তির অপেক্ষায় থাকা ঢাকা ২৮২ মেগাওয়াট থেকে ৭.০১ সেন্ট. ঢাকা ৬৩৫ মেগাওয়াট  থেকে ৬.৯৫ সেন্ট ও চট্টগ্রাম ২৮২ মেগাওয়াট থেকে ৬.৯৮ সেন্ট দরে বিদ্যুৎ কিনবে সরকার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা দাঁড়াবে প্রায় ৫.৭৯ টাকা। চুক্তিগুলো হবে ১৫ বছর মেয়াদি।

প্রতি বছর ২ হাজার ৪১ কোটি টাকা বাড়তি হলে ১৫ বছরে বাড়তি অর্থ পরিশোধ করতে হবে ৩০ হাজার ৬শ’ ১৫ কোটি টাকা। কেন এই বর্ধিত মূল্যে চুক্তি করা হচ্ছে তার কোনই সদুত্তর পাওয়া যায় নি।

ওরিয়ন গ্রুপকে আগে গড় দর দেওয়া হয়েছে ইউনিট প্রতি ৩.৮২ টাকা। একই কোম্পানিকে কেন বাড়তি দর দেওয়া হলো তারও কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা।

তারা ওরিয়নের সঙ্গে নতুন চুক্তি না করার পক্ষে মতামত দিলেও একটি মহলের চাপে তাদের আপত্তি হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। তারা বলেছেন, সরকার চাইছে ওরিয়নকে দিতে। আমাদের করার কি আছে।

স্বল্প পরিসরে ইউনিট প্রতি ১.৯৭ টাকা সাধারণ চোখে দেখা যাওয়ার কথা নয়। কিন্তু বছরের অংক কষলে পিলে চমকানোর মতো অবস্থা।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুহু রুহুল্লাহ জানান, বাড়তি দর দেওয়া হয়েছে একথা সঠিক। তবে তা গোপনে দেওয়া হয় নি। উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। পিডিবিকে দোষ দেওয়া ঠিক হবে না।

ওরিয়নের সঙ্গে ২০১২ সালের ২৭ জুন প্রথম ৩টি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি করে সরকার। আগের ৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র মাওয়া ৪৫ মাস আর অন্য দু’টি ৩৬ মাসের মধ্যে উৎপাদনে যাওয়ার কথা।  কিন্তু ১৯ মাস পার হয়ে গেলেও এখনও অর্থায়ন নিশ্চিত করতে পারেনি ওরিয়ন।

নিয়ম রয়েছে অর্থায়ন নিশ্চিত করার পর চুক্তি সম্পাদনের। অর্থায়নের বিষয়ে সরকার বা বিদ্যুৎ বিভাগের কোনো দায় থাকে না। সংশ্লিষ্ট কোম্পানি যদি যথাসময়ে কাজ শুরু করতে না পারে তাহলে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে কোন রকম আপত্তি গ্রহণযোগ্য হবে না।

নিয়ম রয়েছে সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের ১২০ দিনের মধ্যে অর্থায়নকারির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। কিন্তু ওরিয়ন গ্রুপ এখন পর্যন্ত নানা রকম তথ্য দিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে বিভ্রান্ত করে কালক্ষেপণ করছে। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, অগ্রগতির কথা জানতে চাইলে ওরিয়ন গ্রুপ একেক সময় একেক রকম তথ্য দিচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ