পানির দাবি আদায়ে সোচ্চার নন রাজনীতিকরা

anu muhammad আনু মুহাম্মদরিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘নদীতে পানি থাকলে তার আর্থিক মূল্য নির্ধারণ করা কঠিন। কিন্তু শুকিয়ে গেলে তা হাজার কোটি টাকার জমিতে পরিণত হয়। তারপর শুরু হয় এই পতিত জমি নিয়ে দখল-বাণিজ্য। তাই রাজনৈতিক নেতারা এই পানির দাবি আদায়ে সোচ্চার নন।’

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত ‘অভিন্ন নদীতে ভারতের আগ্রাসননীতি: বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

আনু মোহাম্মদ বলেন, ‘অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে বাংলাদেশকে অবিলম্বে জাতিসংঘের ১৯৯৭ সালের আন্তর্জাতিক নদীসংক্রান্ত কনভেনশনে স্বাক্ষর করতে হবে।’

এ সময় ভারতীয় আগ্রাসী ও আধিপত্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তুলতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, ‘অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় আলোচনার ভিত্তিতে এর সমাধান করা জরুরি।’

বিদ্যুৎ প্রকৌশলী বি ডি রহমতুল্লাহ বলেন, ‘ভরা মৌসুমে দেশের অভ্যন্তরে নদীর দৈর্ঘ্য থাকে ছয় হাজার কিলোমিটার, কিন্তু খরা মৌসুমে তা সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারে নেমে আসে। এই দৈর্ঘ্য ক্রমাগত আরও কমে আসছে ভূমিদস্যুতা, অবৈধ ড্রেজিং, খাল-নদী ভরাট ইত্যাদি কারণে। ফলে বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত বর্ষণের ফলে পানিপ্রবাহ বেড়ে গেলে নদীর দুই পাশ প্লাবিত হয়ে লোকালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

আলোচ্য বিষয়ের ওপর লিখিত বক্তব্যে আবুল হাসান রুবেল বলেন, ‘অভিন্ন নদীর ওপর ভারতের একের পর এক বাঁধ নির্মাণের কারণে বঙ্গোপসাগরে পলি জমার হার কমে গেছে। ১৯৭১ সালে বঙ্গোপসাগরে ২.৫ বিলিয়ন টন পলি জমত, কিন্তু ১৯৯১ সালে তা ১.২ বিলিয়ন টনে নেমে আসে; বর্তমানে তা আরও কমে গেছে। এই ধারা চলতে থাকলে এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে ভবিষ্যতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘ক্রমাগত বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে ভারত তিস্তা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ, প্রাণ-প্রতিবেশ এবং বাস্তুসংস্থান নষ্ট করছে। নদীর উৎসস্থল সিকিমে চারটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। তিস্তার সঙ্গে মহানন্দা ও মেচি নদীর সংযোগ ঘটিয়ে পানি টেনে নেয়া হচ্ছে বিহারে; তৈরি করা হয়েছে গজলডোবা সেচ প্রকল্প। এসব কারণে তিস্তা নদীর বাংলাদেশ অংশ পরিণত হয়েছে ক্ষীণধারার নালায়।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকীর সঞ্চালনায় আলোচনায় সভায় আরও অংশ নেন গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিমা আক্তার হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান, প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, বাসদ নেতা সুধাংশু চক্রবর্তী, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আবদুস সাত্তার প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ