আর কোনো ত্বকীকে হারাতে চায় না দেশ

রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, নারায়ণগঞ্জঃ   আজ ৬ মার্চ বৃহস্পতিবার মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী (১৭) হত্যাকান্ডের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। গত বছর এই দিনে ত্বকী নারায়ণগঞ্জ শহরের শায়েস্তা খান সড়কের বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু ওই দিন রাতে সে বাড়িতে ফিরে আসেনি।

৮ মার্চ সকালে চাড়ারগোপে শীতলক্ষা নদীর তীর থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করা হয়। ত্বকী বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বির বড় ছেলে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও রফিউর রাব্বি ত্বকী হত্যার জন্য সরাসরি বর্তমান সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে দোষারোপ করেন।
অবশ্য শামীম ওসমান এ ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

এদিকে ত্বকীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব হালিম আজাদ প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ত্বকীর কবর জিয়ারত ও ফাতেহা পাঠ, বাদ জোহর রফিউর রাব্বির শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসভবনে পারিবারিক উদ্যোগে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

শুক্রবার বিকেল ৪টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, সেগুনবাগিচায় দুটি গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠান হবে। ত্বকী মঞ্চ থেকে ত্বকীকে নিয়ে বিভিন্ন লেখক ও কবির প্রবন্ধ ও কবিতা, ত্বকীর লেখা বাংলা ও ইংরেজি কবিতা, ছোটগল্প, নিবন্ধ এবং বিভিন্ন ছবিসংবলিত স্মারক গ্রন্থ ‘জনান্তিকে ত্বকী’ প্রকাশিত হবে। মফিদুল হকের সম্পাদনায় সাহিত্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত ত্বকীর লেখা বাংলা ও ইংরেজি কবিতা, ছোটগল্প, নিবন্ধ এবং বিভিন্ন ছবিসংবলিত গ্রন্থ ‘ত্বকীর বই’ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আলোচনা করবেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, কামাল লোহানী, ড. শফিউদ্দিন আহমদ প্রমুখ।

শনিবার বিকেল ৪টায় চাষাঢ়াস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মা ও শিশু সমাবেশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।

হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বিবরণ: আসামিদের স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায়, ত্বকীর বাবা রাফিউর রাব্বি বামপন্থী নেতা এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সংগঠক। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি বর্তমান মেয়র বেগম সেলিনা হায়াত আইভীর পক্ষে ব্যাপক প্রচার চালান। এর ফলে প্রতিপক্ষ ও তাদের লোকজন রাব্বির ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। এছাড়া যাত্রী পরিবহনে নিয়োজিত বিভিন্ন পরিবহনের মালিকরা অনৈতিকভাবে বাসভাড়া বাড়ানোর চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। এতেও স্বার্থান্বেষী মহল তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। প্রতিশোধ হিসেবে তারা তার ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

আসামিদের জবানবন্দি থেকে আরো জানা যায়, আজমেরী ওসমান এলাকায় ‘যুবরাজ’ হিসেবে পরিচিত। ওই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা এবং প্রত্যক্ষভাবে হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী তিনি। আজমেরী ওসমান পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তার ব্যবসায়ীক কার্যালয় উইনার ফ্যাশনকে বেছে নেন। তার ওই উইনার ফ্যাশন কার্যালয়টি নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে ‘টর্চার সেল’ হিসেবে পরিচিত। আজমেরী ওসমানের নির্দেশে ৬ মার্চ বিকেলে তার সহযোগীরা স্থানীয় শ্রম কল্যাণ কার্যালয় থেকে ত্বকীকে অপহরণ করে। রাত সাড়ে ৯টায় ত্বকীকে উইনার ফ্যাশনে নেওয়া হয়। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রাত ১১টার পর আজমেরী ওসমান, কালাম শিকদারসহ অন্যরা ত্বকীকে হত্যা করে। রাত ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে লাশটি বস্তাবন্দি করে আজমেরী ওসমানের এক্স ফিল্ডার গাড়ির পেছনের ডালায় ওঠায়। পরে কুমুদীনি জোড়াখালে নিয়ে ফেলে দেয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে আজমেরী ওসমান পলাতক বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।

তদন্তে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মামলার চার্জশিটে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত তিনটি লাঠি আলামত হিসেবে দেখানো হচ্ছে। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত এক্স ফিল্ডার গাড়িও সুলতান শওকত ভ্রমরের ব্যবহৃত মার্ক-টু-গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর এবং মালিকানার বর্তমান অবস্থাসহ যাবতীয় তথ্য সরবরাহের জন্য নারায়নগঞ্জ বিআরটিএ-এর পরিচালকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ঘটনার আগে ও পরে আসামিরা যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে একে অপরের সঙ্গে কথা বলেছে তার একটি পর্যালোচনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

এদিকে তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ না পাওয়ায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের মধ্যে সালেহ রহমান সীমান্ত ও রিফাত বিন ওসমানকে মামলার দায় থেকে মুক্তি দেয়ার সুপারিশ করা হতে পারে বলেও জানা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ