আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

shohid shahid buddhijibi dibos শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসসিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ আজ ১৪ ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দুদিন আগে হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, চলচিত্রকার, সাংবাদিকসহ দেশের বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে হত্যা করে।যাতে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনীর সদস্যরা।
পরে শরীরে নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিহ্নসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়েরবাজার এলাকায়। পরে তা বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
স্বাধীনতার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ডের জন্ম তখন সময়ের ব্যাপার। পরাজয়ের চরম প্রতিহিংসায় উন্মত্ত পাকিস্তানি সেনারা এদেশেরই কিছু দালালের সহায়তায় বেছে বেছে হত্যা করে শুভবুদ্ধি সম্পন্ন অনেককে। মেধা শূন্য করতে বাঙালি জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিতেই এই গভীর এবং ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করেছিল।

মেধায় মননে, সৃজনশীলতায় এদেশের মানুষ যেন স্বাধীনতা পরবর্তী বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে সে লক্ষ্যে এইদিন বাংলাদেশের অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। মোহাম্মাদপুরের বেড়ী বাধ সংলগ্ন রায়েরবাজারের বধ্যভূমিতে অনেকের লাশ পাওয়া যায়। অথচ এই হত্যাকাণ্ডের একদিন পরই বাংলাদেশের মানুষের কাছে মাথানত করতে বাধ্য হয় কাপুরুষ পাকিস্তানি ও দেশীয় দালালরা।

এই দিন প্রাণ দিতে হয় বাংলার কৃতি সন্তান অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, সাহিত্যিক  সেলিনা পারভীন, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশেদুল হাসান, ড. আনোয়ার পাশা, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, নিজামুদ্দীন আহমেদ, গিয়াসউদ্দিন আহমদসহ অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে। এই ক্ষতি পূরণ হবার নয়। তাই শোকার্ত বাঙালী জাতি স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে সেই সব কৃতি সন্তানদের।

প্রতিবছর জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে এ দিনটি পালন করে থাকে। রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতি সৌধে সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন সংগঠন এবং দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সর্বস্তরের মানুষ।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শ্রদ্ধায় জাতির এই সন্তানদের স্মরণ করেছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, “জাতির বিবেক হিসেবে খ্যাত আমাদের বুদ্ধিজীবীরা মহান মুক্তিযুদ্ধকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য, বিজয়ের প্রাক্কালে হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে এদেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পীসহ বহু গুণিজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। জাতিকে মেধাহীন করাই ছিলো তাদের হীন উদ্দেশ্য।”
শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসকে জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কময় দিন হিসাবে আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে নামে।”
মানবতাবিরোধীদের বিচারের রায় বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, “এই কুখ্যাত মানবতাবিরোধীদের যারা রক্ষার চেষ্টা করছে তাদেরও একদিন বিচার হবে। এসব রায় বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই শহিদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মা শান্তি পাবে। দেশ কলঙ্কমুক্ত হবে।”
প্রধানমন্ত্রী দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিককে একাত্তরের ঘাতক, মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী জামায়াতচক্রের সকল ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
দিবসটি উপলক্ষে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, “শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে শাহাদৎ বরণকারী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি।”
বিরোধী দলীয় নেতা ১৪ ডিসেম্বরকে একটি বেদনাময় দিন হিসেবে উল্লেখ করে তার বাণীতে বলেন, “বাংলাদেশকে মেধা মননে পঙ্গু করার হীন উদ্দেশ্যে স্বাধীনতার ঊষালগ্নে এ দিনে হানাদার বাহিনীর দোসররা দেশের প্রথিতযশা শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক বিজ্ঞানীসহ বিশিষ্ট বুদ্ধজীবীদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছিলো। ওরা ভেবেছিলো জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করলেই এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব দুর্বল হয়ে পড়বে এবং উন্নয়ন অগ্রগতি রুদ্ধ করে দেওয়া যাবে। কিন্তু তাদের সে লক্ষ্য ব্যর্থ হয়েছে।”
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শনিবার সর্বপ্রথম রাষ্ট্রপতি এবং পরে সকাল ৭টা পাঁচ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দেবেন।
এরপর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
দিবসটি উদযাপনের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিকে সামনে রেখে আগের বছরগুলোতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করা হলেও যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পর আনন্দের মাঝেও জামায়াত-শিবিরের দেশব্যাপী সহিংসতা ও তাণ্ডবে শঙ্কায় পালিত হচ্ছে এবারের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ