শেখ হাসিনা ভারতের আপনজন

সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ উপলক্ষ ছিল পাঞ্জাবের আট্টারি-ওয়াঘা সীমান্তের ধাঁচে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে জয়েন্ট রিট্রিট সেরিমনির সূচনা। সেখানেই প্রকাশ্য সমাবেশে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভারতের আপনজন’ বলে উল্লেখ করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে। পাঁচ বছরে হাসিনার আমলে ঢাকা ভারতকে যেভাবে সহযোগিতা করেছে, তার প্রতিদান দিতে নয়া দিল্লিও বদ্ধপরিকর বলে ঘোষণা করেন তিনি। বুধবার শিন্দে যখন এ কথা বলেন, করতালি দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন উপস্থিত বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর। আজ এই খবর দিয়েছে ভারতের কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা।

আনন্দবাজার লিখেছে, `নিজের বক্তৃতায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ভূয়সী প্রশংসা করেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বকে ‘চিরায়ত’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এ জন্য আমরা গর্বিত। এর পরে সুশীলকুমার শিন্দে বলেন, ‘দু’দেশের বন্ধুত্বের কথা বলতে গেলে শেখ হাসিনাজির কথা বলতেই হয়। আমার তো মনে হয়, উনি যেন এই বাংলারই মেয়ে। আমাদের অত্যন্ত আপনজন’ শিন্দের কথায়, ‘বাংলাদেশের মাটিতে আশ্রয় নেওয়া এদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলিকে উচ্ছেদ করার ক্ষেত্রে হাসিনা সরকারের ভূমিকা প্রশংসনীয়। ভারত নিশ্চয়ই তার প্রতিদান দেবে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, `শিন্দে জানান, ভিসা-প্রক্রিয়া সরলীকরণ, সীমান্ত পারের সন্ত্রাস দমন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও উগ্রপন্থা দমনের ক্ষেত্রে দুই দেশ গত কয়েক বছরে যৌথ ভাবে কাজ করে সাফল্য পেয়েছে। হাসিনা ও মনমোহন সরকারের মধ্যে একাধিক প্রটোকল স্বাক্ষর হয়েছিল। তার অনেকগুলি রূপায়ণ করা গিয়েছে, কিছু চুক্তির প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। দীর্ঘ সীমান্তের যে সব ভুল বোঝাবুঝি ছিল, তা-ও স্বরাষ্ট্রসচিব এবং বিএসএফ-বিজিবি’র ডিজি পর্যায়ের আলোচনায় দূর করা গিয়েছে। সীমান্তে তার প্রভাবও দেখা গিয়েছে। বিএসএফ-বিজিবি এখন যৌথ ভাবে সীমান্তে তল্লাশিও শুরু করেছে।’

আনন্দবাজার আরো বলেছে, ‘যদিও এ দিন অনুষ্ঠান চলাকালীন তিস্তা জলচুক্তি বা স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে একটি কথাও বলেননি শিন্দে। পরে সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের আগে তিস্তা জলবণ্টন বা স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে কেন্দ্র কোনও পদক্ষেপ করবে কি? মৃদু হেসে শিন্দে শুধু বলেন, দেখা যাক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তিস্তা প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ ব্যাপারে তাঁর আপত্তির কথা আবার জানিয়ে দিয়েছেন। বুধবার নবান্নে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমিও ভালবাসি। কিন্তু রাজ্যকে না জানিয়ে যে ভাবে তিস্তা ও ফরাক্কার জল দেওয়া হচ্ছে, তাতে রাজ্যবাসীর স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।’

তিনি জানান, ‘এই দুই জায়গা থেকে বাংলাদেশকে জল দেওয়ায় হলদিয়া বন্দরের নাব্যতা কমে যাচ্ছে। এতে হলদিয়া এবং কলকাতা বন্দর মার খাচ্ছে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অশান্তির আঁচ এদেশে পড়বে কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রাক নির্বাচনী অশান্তি সাময়িক ব্যাপার। কিন্তু দু’দেশের বন্ধুত্বটা চিরস্থায়ী। বাংলাদেশে বিরোধী দল বিএনপির ক্রমাগত ভারত

বিরোধী অবস্থান প্রসঙ্গে শিন্দে বলেন, ‘এ দেশেও বিরোধী দল অনেক সময় নানা কথা বলে। সম্পর্ক নির্ভর করে দু’দেশের সরকারের মধ্যে বোঝাপড়ায়।’

আনন্দবাজার আরো লিখেছে, ‘এ দিনের জয়েন্ট রিট্রিট সেরিমনির কুচকাওয়াজও দুই দেশের সম্পর্কের আবহেই তৈরি করা হয়েছে। বিএসএফের পূর্বাঞ্চলের এডিজি বংশীধর শর্মার কথায়, ‘এখানে যৌথ কুচকাওয়াজে ওয়াঘার মতো আক্রমণাত্মক ভঙ্গি রাখা হয়নি। এই ড্রিল হচ্ছে বন্ধুত্বের বার্তা দিতে। তাই জওয়ানরা জিরো লাইনে গিয়ে উভয়পক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আবার ফিরে আসে নিজের ভূখণ্ডে। কুচকাওয়াজের সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও যোগ করা হয়েছে এখানে।’বন্ধুত্বের বার্তাই ছিল অনুষ্ঠানের প্রতিটি পরতে। বিএসএফের ডিজি সুভাষ জোশীও এ দিনের বক্তব্যে, তাঁর বাহিনীর বীরত্বের কথা শোনাননি। এদেশে এসে মাকে হারানো একরত্তি মেয়ে আফরোজাকে সাত বছর পর ঢাকা ফেরানোর ঘটনার কথাই বলেছেন। আর বিজিবি’র ডিজি মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ অনুষ্ঠানের প্রটোকল সূচিতে না থাকা সত্ত্বেও এ দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নির্দেশক অলকানন্দা রায়কে উপহার দিয়েছেন বিশেষ স্মারক।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ