গুণগত শিক্ষাই আমাকে এতদূর আসতে সাহায্য করেছে

dr md. yunus ড. মুহাম্মদ ইউনুসড. মুহাম্মদ ইউনূস, ঢাকাঃ মানসম্মত শিক্ষাই বাংলাদেশের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম যেখানে আমি বেড়ে উঠি, সেখান থেকে আমাকে বহদূর নিয়ে এসেছে।

১৯৪০ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে আমি জন্মেছিলাম, যেটা এখন বাংলাদেশের অংশ। আমার বাবা-মার কাছে শিক্ষার গুরুত্ব সবসময়ই ছিল। এবং আমাদের যতটুকু শিক্ষার দরকার তা তারা প্রদান করতে সক্ষম ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার ডিগ্রি অর্জনের পর আমি ভেন্ডারবিট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করি। এরপর মিডল টিনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পাঠদান শুরু করি।

১৯৮০ সালের প্রথম দিকে সেখান থেকে ফিরে এসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করি। সেখানে আমি দেখতে পাই,  সম্পদের‍ অন্যায্য ব্যবস্থাপনা অর্থনীতি ও শিক্ষার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

এটি দেখেই প্রথাগতভাবে যারা অর্থহীন হিসেবে চিহ্নিত সেসব লোকদের ঋণ দিতে আমি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করি। গ্রামীণ ব্যাংক দরিদ্র ও অশিক্ষিতদের নিয়ে কাজ করে। তাদেরকে ব্যাংক ছোট ছোট ব্যবসা করতে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করে। এসব ছোট ছোট ব্যবসার মাধ্যমে তারা নিজেকে ও পরিবারকে দারিদ্র্য বের করে আনতে পারে।

এরই অংশ হিসেবে ঋণগ্রহীতাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদানের বিষয়টি আমরা উপলব্ধি করি যাতে বাবা-মার মতো তাদের সন্তানরা একই বৈষম্যের শিকার না হয়। গ্রামীণ ব্যাংক ঋণগ্রহীতাদের সন্তানদের বিনামূল্য শিক্ষা দান করছে। সেসব শিক্ষিত ছেলে-মেয়ে আজকে নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করছে,  নিজেদের এবং অন্যদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করছে।

উন্নয়নশীল বিশ্ব উদ্যোক্তা আর স্বপ্নদর্শীদের দিয়ে পূর্ণ যারা শিক্ষা, সাম্য এবং অর্থের অভিগম্যতার কারণে নিজ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আজকে ২৫০ কোটি প্রাপ্ত বয়স্ক রয়েছে, যাদের সাড়ে ৭৭ কোটি জন নিরক্ষর, তারা বিশ্বের সমস্যা সমাধানে সম্পদ হতে পারত। ৫ কোটি ৭০ লাখ শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ নেই। যদি নিম্ন আয়ের দেশগুলোর সব দেশের মৌলিক পড়াশোনার দক্ষতা থাকতো তাহলে ১৭ কোটি ১০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত থাকত।

প্রতিটি শিশুর স্কুলে যাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান অব্যাহত রাখি তাহলে সার্বজনীন শিক্ষার প্রতিশ্রুতি আমরা পূর্ণ করতে পারব।

গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন (জিপিই) এর মাধ্যমে সমতাভিত্তিক ও টেকসই উন্নয়ন কৌশলে বৃদ্ধিতে ২০১২ সালে আমি, কফি আনান, মাইকেল ক্যামডেসুসসহ অন্যান্যরা আফ্রিকা প্রগ্রেস প্যানেলে যোগ দেই।

প্রতিটি শিশুকে শিক্ষাদানে প্রতিশ্রুতবদ্ধ বিশ্বের একমাত্র বহুমাত্রিক অংশীদারিত্বমূলক উদ্যোগ জিপিই এই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে নিবেদিত। তরুণদের শিক্ষার সুযোগে সহায়তা ও শিক্ষা সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল অংশীদারী দেশগুলোর প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ২০১৫ সালের মধ্যে সংঘাতপীড়িত এবং দুর্বল রাষ্ট্রগুলোর ১৫ কোটি মানুষকে শিক্ষার আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে বিশ্বের দরিদ্রদের প্রতি নিজেদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বানে আমাদের অব্যশই যোগ দিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ