তিন দাবিতে কর্মবিরতিতে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকেরা
নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (২৫ নভেম্বর) : গ্রেড ও পদোন্নতির জটিলতা নিরসনসহ তিন দাবিতে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু করেছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা। ১২টি শিক্ষক সংগঠনের মোর্চা ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে আজ মঙ্গলবার থেকে তিন দিনের এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড নিয়ে জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতি এই তিন দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষকেরা।
মোর্চাভুক্ত সংগঠন বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি শাহীনুর আল আমিন বলেন, ‘পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। সহকারী শিক্ষক এন্ট্রি পদে বেতনে ১১তম গ্রেড নির্ধারণ, ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা চেয়ে আমরা সরকারকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছিলাম। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত রোববার ও সোমবার অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছি।’
এদিকে কিছুদিন আগে দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে আন্দোলন করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের চার সংগঠনের মোর্চা ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ অনুসারী শিক্ষকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন না।
দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক নোয়াখালী সদর উপজেলার ত্রিপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন মাসুদ জানান, তাঁর বিদ্যালয়ে ক্লাস চলছে। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার একাদশ গ্রেডে বেতন দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল, তা বাস্তবায়নে আমরা ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছি। দাবি মেনে নেওয়া না হলে আমরা ৩০ নভেম্বর থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন শুরু করব।’
গত ৮ নভেম্বর শহীদ মিনারে দশম গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতির দাবিতে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ ব্যানারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকেরা। সেদিন বিকেলে তাঁরা ‘কলমবিরতি কর্মসূচি’ পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে শাহবাগ থানার সামনে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, লাঠিচার্জ, কাঁদুনে গ্যাস প্রয়োগ করে শহীদ মিনারে ফেরত পাঠায়। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষকেরা পরদিন থেকেই কর্মবিরতি শুরু করেন।
পরে গত ১০ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন আন্দোলনরত শিক্ষকেরা। সভায় একাদশ গ্রেডে বেতন নির্ধারণ এবং উচ্চতর গ্রেড ও পদোন্নতির জটিলতা নিরসনে সরকার আশ্বাস দিলে ওইদিন রাতে তাঁরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন ৷
এর আগে তিন দাবিতে ২৬ মে থেকে ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন শিক্ষকেরা। দাবি আদায়ে তাঁরা ৫ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত দিনে ১ ঘণ্টা, ১৬ থেকে ২০ মে পর্যন্ত ২ ঘণ্টা, ২১ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন।
পরে গত ২৯ মে সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলে কর্মবিরতির কর্মসূচি ২৫ জুন পর্যন্ত স্থগিত করা হয়।
গত ৩০ আগস্ট শহীদ মিনারে মহাসমাবেশের মাধ্যমে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ‘আমরণ অনশন’ কর্মসূচির ঘোষণা দেন শিক্ষকেরা। পরে দুর্গাপূজার কারণে অনশন কর্মসূচি ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়।
গত ১৬ অক্টোবর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনার পর শিক্ষকেরা অনশন কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেন।
এরইমধ্যে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করা সহকারী শিক্ষকদের মূল দাবি একাদশ গ্রেডে বেতন নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ত্রয়োদশ গ্রেডে বেতন পাওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন একাদশ গ্রেডে উন্নীত করার প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে গত ১৮ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ‘যেসব সহকারী শিক্ষক ১৩ তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন, তাঁরা যেন ১১ তম গ্রেডে বেতন পান সেজন্য আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ে লিখেছি। উনারা রেফার করেছেন বেতন কমিশনে। আমরা কেবিনেট ডিভিশনে তদবির করেছি, যেন উনারা আমাদের ফেভারে বলেন, উপদেষ্টাদের তদবির করছি যেন ফেভারে বলেন। আমি নিজে বেতন কমিশনে গিয়েছি, আমি গিয়ে উনাদের কনভিন্স করার চেষ্টা করছি।’
মনোয়ারুল হক/
