গাজায় পূর্ণ সেনা প্রত্যাহারের দাবি হামাসের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ, (৮ অক্টোবর) : মিশরে গাজার জন্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে চলমান পরোক্ষ আলোচনা মঙ্গলবার (০৭ অক্টোবর) দ্বিতীয় দিনেও শেষ হয়েছে। এই আলোচনায় হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তারা স্পষ্ট জানিয়েছেন, তারা চায় ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ থামাবে এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহার করবে। এই দাবি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফার পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে করা হয়েছে।
অন্যদিকে, গাজার সংঘাতের দুই বছরের বার্ষিকীতে হোয়াইট হাউসে দেওয়া এক বক্তব্যে ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন, গাজা চুক্তির ‘বাস্তব সম্ভাবনা’ রয়েছে। মঙ্গলবার মিশরের শারম আল-শেখ শহরে আলোচনার এই আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এর আগেই হামাসসহ বিভিন্ন ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী একটি যৌথ বিবৃতিতে জানান, তারা ‘সব ধরনের প্রতিরোধ অব্যাহত রাখবে’ এবং ‘কেউ ফিলিস্তিনি জনগণের অস্ত্র ত্যাগের অধিকার রাখে না।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ট্রাম্পের পরিকল্পনায় হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের অনুরোধের জবাব হিসেবে দেখা হচ্ছে।
হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা ফাওজি বারহুম জানান, তাদের আলোচকরা মূলত যুদ্ধের সমাপ্তি এবং ‘দখলদার বাহিনী সম্পূর্ণ প্রত্যাহার’ করার বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। তবে ট্রাম্পের প্রস্তাবে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা নির্দিষ্ট করা হয়নি; সেখানে বলা হয়েছে, সেনা প্রত্যাহার শুরু হবে শুধু ৪৮ জন ইসরায়েলি বন্দীর মুক্তির পর। ধারণা করা হচ্ছে, এদের মধ্যে ২০ জন জীবিত রয়েছেন।
আলোচনার পরে আল জাজিরাকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হামাস কর্মকর্তা জানান, বন্দিদের মুক্তি ধাপে ধাপে হবে এবং তা ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের সময়সূচির সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। মূল আলোচনা বন্দিমুক্তি পরিকল্পনা এবং সেনা প্রত্যাহারের মানচিত্রকে কেন্দ্র করে হয়েছে।
মিশরের রাষ্ট্র-সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যম আল কাহেরা নিউজ জানিয়েছে, হামাসের শীর্ষ আলোচক খলিল আল-হাইয়া বলেছেন, দলটি ‘এক মুহূর্তের জন্যও দখলদারিত্বে বিশ্বাস করে না।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, তারা চায় যুদ্ধ ‘প্রকৃত নিশ্চয়তার সঙ্গে শেষ হোক’ এবং পুনরায় শুরু হবে না। একই সঙ্গে তিনি পূর্বের দুই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগও তুলেছেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাস-নেতৃত্বাধীন হামলার বার্ষিকীতে বিবৃতিতে বলেন, গত দুই বছরের সংঘাত ইসরায়েলের ‘অস্তিত্ব ও ভবিষ্যতের লড়াই।’
তিনি বলেন, দেশটি এখন ‘গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়ের’ মধ্যে রয়েছে। সরাসরি যুদ্ধবিরতি বিষয়ে কিছু না বললেও নেতানিয়াহু উল্লেখ করেন, ‘ইসরায়েল তার যুদ্ধের লক্ষ্য পূরণে কাজ চালাবে- সব বন্দিকে ফিরিয়ে আনা, হামাসের শাসন অবসান করা এবং গাজাকে ইসরায়েলের জন্য আর হুমকি হতে না দেওয়া।’
যুদ্ধবিরতি আলোচনায় পার্থক্য থাকলেও কিছু অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে। ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনার বিভিন্ন ধাপ নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে কিছুটা সমঝোতা হয়েছে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি জানিয়েছেন, মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো—কাতার, মিশর ও তুরস্ক- আলোচনায় নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করছে এবং আলোচনার গতি অনুযায়ী নতুন প্রস্তাব তৈরি করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা পূর্বনির্ধারিত কোনো কাঠামোতে আলোচনা শুরু করি না; প্রস্তাবগুলি আলোচনার সময়ই তৈরি হয়।’
আনসারি আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুলরহমান আল থানি বুধবার মিশরে অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীর সঙ্গে যোগ দেবেন। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে উপস্থিত থাকবেন স্টিভ উইটকফ ও জ্যারেড কুশনার।
তিনি আরও বলেন, ‘কাতারের প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ প্রমাণ করে, মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধবিরতি চূড়ান্ত করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
তবে যুদ্ধ শেষ হলেও গাজা কে পরিচালনা করবে বা পুনর্গঠনের ব্যয় কে বহন করবে—এই প্রশ্নগুলো এখনও অনিশ্চিত।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংঘাত পর্যবেক্ষক সংস্থা এসিএলইডি জানায়, গত দুই বছরে গাজায় ১১ হাজারেরও বেশি বিমান ও ড্রোন হামলা এবং অন্তত ৬ হাজার ২৫০টি গোলাবর্ষণ হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১৪ শতাংশ গাজার। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধকালীন সময়ে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৭০১ জন চিকিৎসাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন।