বিল তুলে নিলেও শেষ করেনি সড়কের কাজ
নিজস্ব প্রতিবেদক (খুলনা), এবিসিনিউজবিডি, (২২ নভেম্বর) : খুলনার দাকোপ ইউনিয়ন পরিষদ অফিস থেকে বাজুয়া ইউনিয়ন পরিষদ অফিস পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের কাজ শেষ হয়নি ছয় বছরেও। ঠিকাদারের অবহেলার কারণে সড়ক সংস্কার না হওয়ায় পার্শ্ববর্তী দুইটি ইউনিয়নের হাজারো মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এদিকে এক বছরের মধ্যে কাজটি শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিনেও তা শেষ না করেই বিলের অর্ধেক টাকা উঠিয়ে নিয়েছে। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ বাতিল করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে সুপারিশ করেছে।
এলজিইডি থেকে জানা যায়, সড়কটির দুই হাজার পাঁচশ মিটার উন্নয়নকাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামেলা ট্রেডার্সের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। চুক্তিকৃত দর ছিল ১ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার টাকা। ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৫ অক্টোবরের মধ্যে কাজটি শেষ করার কথা ছিল। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ না করে একাধিকবার সময় চেয়ে আবেদন করে। সবশেষ চলতি বছরের ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সেটা ব্যর্থ হয়েছে। সম্পূর্ণ সড়কটির কার্পেটিংয়ের কাজ এখনো বাকি রয়েছে। অথচ তিন বছর আগেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চুক্তিমূল্যের অর্ধেকের বেশি টাকা উঠিয়ে নিয়েছে। এদিকে সড়কে খোয়া থাকার কারণে দাকোপ ও বাজুয়া ইউনিয়নবাসীর চলাচলে ভোগান্তি হচ্ছে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানায়, সড়কটির কাজ আদৌ শেষ হবে কি না, জানি না। শুনেছি আওয়ামী লীগের আমলেই ঠিকাদার কাজের বিল উঠিয়ে নিয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এসব বিষয়ে বললেও কোনো কাজ হচ্ছে না। তারা বলছেন, যার যার সমস্যা তার তার। স্থানীয়রা বলেন, এ রাস্তায় খোয়া থাকার কারণে সাইকেল, ভ্যান নিয়ে চলাচল করতে কষ্ট হয়। বর্ষার সময়ে তো চলাচল করাই যায় না। কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি, দুটি ইউনিয়নের মানুষের কথা চিন্তা করে খুব দ্রুতই সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হোক।
দাকোপ উপজেলা প্রকৌশলী এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি তিন বছর আগে এখানে যোগদান করেছি। এর আগে থেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ বন্ধ করে ভোগান্তি বাড়িয়েছে। এ বিষয়ে আমি এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। এবার কাজ না করলে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি বাতিলসহ জরিমানা করা হবে। এলজিইডি খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম সরদার জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজটি বাতিল করার জন্য আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি। দীর্ঘদিন নানা কারণে কাজটি না করে রেখেছিল ঠিকাদার। এছাড়া কাজের তহবিলও তেমন ছিল না। তবে বর্তমানে তহবিলের কোনো সমস্যা নেই। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে সময় চেয়েছে। আগামী সপ্তাহে তারা কাজ শুরুর আশ্বাস দিয়েছে। এই কাজে প্রায় কোটি টাকার বিল ইতোমধ্যে পরিশোধ করা হয়ে গেছে।
মেসার্স জামেলা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. সাইদুর রহমান বলেন, কাজটি আমার ভাই আরেকজন অংশীদারকে নিয়ে করছিল। তারা প্রায় ১ কোটি টাকার মতো বিল নিয়েছে। তবে কাজ শেষ করতে পারেননি। তিনি বলেন, করোনার সময় আমি অসুস্থ ছিলাম। এছাড়া দীর্ঘদিন তহবিলে টাকা না থাকায় কাজ করা হয়নি। সম্প্রতি কাজটি বাতিল করতে এলজিইডি উদ্যোগ নিয়েছে শোনার পর আমি যোগাযোগ করে সময় চেয়েছি। শিগগিরই সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করব।
মনোয়ারুল হক/
