বাংলাদেশের রোমাঞ্চকর সিরিজ জয়
ক্রীড়া প্রতিবেদক, এবিসি নিউজ, ঢাকা (৪ অক্টোবর) : প্রতিপক্ষকে অল্প রানে বেঁধে রেখে মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছিলেন বোলাররা। কিন্তু ছোট্ট লক্ষ্য তাড়ায় টপ অর্ডার ব্যাটাররা যাওয়া আসার মিছিলে থাকলেন। মিডল অর্ডার খানিকটা ভরসা জোগানোয় কাজটা সহজ হলো। কিন্তু শেষদিকে দ্রুত উইকেট পতনে মিলল নাটকীয়তার আভাস ছিল। তবে প্রথম ম্যাচের মতো শেষের চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিল বাংলাদেশ।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) শারজায় তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ২ উইকেটের রোমাঞ্চক জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ১৪৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৫ বল হাতে থাকতে জয় নিশ্চিত করে টাইগাররা। এই জয়ের সুবাদে এক ম্যাচ হাতে থাকতেই ২-০ তে সিরিজ নিশ্চিত হলো বাংলাদেশের। একই ভেন্যুতে আগামী রবিবারের ম্যাচটি এখন কেবলই আনুষ্ঠানিকতার।
বৃহস্পতিবার সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি ৪ উইকেট হাতে রেখে জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে ১৫২ রান তাড়া করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতেই ১০৯ রান এসেছিল। কিন্তু এরপর হঠাৎ ধসে ম্যাচ কঠিন হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বাংলাদেশই জিতেছিল। আজ বাংলাদেশ ইনিংসের ঘটনাপ্রবাহ ভিন্ন হলেও আফগানরা একই রকমভাবে লড়াই জমিয়ে তুলেছিল।
এদিন টপ অর্ডার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। ২৪ রান যোগ করতেই ফিরে যান তানজিদ হাসান (৭ বলে ২), পারভেজ হোসেন ইমন (৫ বলে ২) ও সাইফ হাসান (১৪ বলে ১৮)। তৃতীয় উইকেটে ৩৭ বলে ৫৬ রান যোগ করে দলকে স্বস্তি এনে দেন জাকের আলী ও শামীম হোসেন। ১১তম ওভারে জাকেরকে এলবিডব্লিউ করে ম্যাচের মোড় ফের ঘুরিয়ে দেন রশিদ খান। ২৫ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ৩২ রান করেন জাকের। এরপর ১৫তম ওভারে ২২ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৩ রান করে নুর আহমেদের শিকার হন শামীম। তবে আগের ম্যাচের মতো এদিনও আস্থা জুগিয়েছেন নুরুল হাসান সোহান। ২১ বলে ১ চার ও ৩ ছক্কায় অপরাজিত ৩১ রানের ইনিংস খেলে তিনি মাঠ ছেড়েছেন। অবশ্য অন্য প্রান্ত থেকে খুব একটা সহায়তা পাচ্ছিলেন না। শেষদিকে সেটা দিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। ভয় ধরা অবস্থায় ৬ বলে ২ চারে অপরাজিত ১১ রান করে তিনি দলের জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন। আজমউল্লাহকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে তিনিই ম্যাচ শেষ করেছেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে রান করতে হাঁসফাঁস অবস্থা ছিল আফগানদের। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৪৭ রানের পুঁজি পেয়েছে দলটি। পাওয়ার প্লেতে খুব বেশি রান তুলতে পারেননি আফগানরা। মাত্র ৩৫ রান তুলতে পারে। তবে দলটির জন্য ইতিবাচক ছিল, এই সময়ে তারা কোনো উইকেট হারাননি। পরে তাই দলটির দুই ওপেনার সেদিকউল্লাহ আতাল ও ইব্রাহিম জাদরান রানের গতি বাড়ান। ১০ ওভার শেষে দলটির স্কোর দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৬৯। বাংলাদেশ প্রথম সাফল্য পেয়েছিল অষ্টম ওভারে গিয়ে। সেদিকউল্লাহকে পারভেজ ইমনের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন রিশাদ হোসেন। ১৯ বলে ২৩ রান করেছেন সেদিকউল্লাহ। দলীয় ৫৫ রানে প্রথম উইকেট হারায় আফগানিস্তান। এরপর ১১তম ওভারে সেট হওয়া ইব্রাহিম জাদরানকে তুলে নেন নাসুম আহমেদ। তাতে ৭১ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারান আফগানরা। ইব্রাহিম ৩৭ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩৮ রান করেন, যা দলটির পক্ষে সর্বোচ্চ।
পরের ওভারে নিজের দ্বিতীয় শিকার ধরেন রিশাদ। চারে ব্যাট করতে নামা ওয়াফিউল্লাহ তারাখিলকে ফিরিয়ে দেন। ৪ বলে ১ রান করেন তারাখিল। ৭২ রানে ৩ উইকেট হারান আফগানরা। এরপর দারভিশ রাসুলিকে ফিরিয়ে দ্বিতীয় উইকেটের স্বাদ নেন নাসুম। ৯ বলে ২ ছক্কায় ১৪ রান করেন রাসুলি। ১৩.৩ ওভারে ৯০ রানে চতুর্থ উইকেট হারান আফগানরা। ১৬.২ ওভারে ১১৮ রানে হারায় পঞ্চম উইকেট। এরপর ষষ্ঠ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন থেকে ২২ বলে ২৯ রান যোগ করেছেন মোহাম্মদ নবি ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই। নবি ১২ বলে ২০ ও ওমরজাই ১৭ বলে ১৯ রনে অপরাজিত ছিলেন। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক ২টি করে উইকেট নিয়েছেন নাসুম ও রিশাদ। ১ উইকেট নিয়েছেন শরিফুল। ব্যাটে-বলে ভূমিকা রাখায় শরিফুলের হাতেই উঠেছে ম্যাচসেরা স্বীকৃতি।