তুরাগ নদের বাঁকে বাঁকে ভাঙন, ছোট হচ্ছে জনপদ

নিজস্ব প্রতিবেদক (গাজীপুর), এবিসি নিউজ, (৩ অক্টোবর) : ক সময় প্রবাহমান স্বচ্ছ জলধারা ছিল গাজীপুরের তুরাগ নদে। তবে বর্তমানে বাঁকে বাঁকে ভাঙন ও দূষণে মৃত প্রায় তুরাগ নদ। দিন দিন ছোট হচ্ছে দুই পাড়ের জনপদ। দুই পাড়ের বালিয়াড়িতে কাশবন আর কলমি লতার সেই অপরুপ সৌন্দর্য এখন শুধু গল্পের বইতে পাওয়া যায়।

তুরাগ নদীর বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা যায়, কালিয়াকৈর উপজেলার খালপাড়, চাপাইর ইউনিয়নের গর্জনখালী, বড়ইবাড়ী, মৌচাক ইউনিয়নের কালিয়াদহ, বোয়ালী ইউনিয়নের কুন্দাঘাটার, মদনখালী, চাবাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙনে ভিটে হারাচ্ছেন বাসিন্দারা। বছর বছর ভাঙনের কবলে পড়ে বহু মানুষ এখন এ জনপদ ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন শহরের দিকে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অগভীর অংশে যথাসময়ে ড্রেজিং না করায় ও শুষ্ক মৌসুমে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা নদের তীর কেটে মাটি বিক্রি করায় দিন দিন নদের ধারাপথ পাল্টে যাচ্ছে। যার ফলে বিভিন্নস্থানে পানির স্রোত বেশি থাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে এসব অংশ রক্ষায় প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই। শুধু ভাঙন নয়, শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুরের অন্তত দুই শতাধিক পোশাক কারখানা ও ডায়িংয়ের অপরিশোধিত কালো দূষিত পানি ফেলা হয় তুরাগ নদে। ফলে নদের পানি দূষিত হয়ে, মাছ-শুশুকসহ জলজ উদ্ভিদ ধ্বংসের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছেছে। নদীর পাড় রক্ষায় এখন এ জনপদের মানুষের দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কিছুই নেই।

মাসুদ মিয়া নামে এক বাসিন্দা বলেন, প্রতি বছর ভাঙে আর একটু একটু করে ঘর সরিয়ে নেই। এভাবে পুরো ভিটেই চলে গেছে নদের মাঝখানে। এখন অন্য স্থানে চলে যাওয়া ছাড়া আর উপায় নাই।

আজগর আলী নামে এক বাসিন্দা বলেন, ছোটবেলা থাইকাই নদীর সাথে আমাগো জীবন গাইথা রইছে। নদী যে আমাগো এমনে কইরা ভিটা খাইব এইটা ঠাওর পাই নাই। এহন ঘর থেকে বাহির হইলেই পা গিয়া নদীতে পড়ে। এই নদী রক্ষা করব কেডা।

এদিকে নদী বাঁচাও আন্দোলনসহ গাজীপুরে অন্তত কয়েকটা সংগঠন রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে নদী খাল বিল রক্ষায় তাদের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর প্রয়োগ করলেও তার যথাযথ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।

নদী বাঁচাও আন্দোলনের কালিয়াকৈর উপজেলা শাখার সদস্য মোতালেব মিয়া বলেন, আমাদের ঐতিহ্যবাহী তুরাগ নদ রক্ষায় আমরা অনেক আন্দোলন করেছি। গ্রামে গ্রামে মানুষকে নিয়ে সভা করেছি। কিন্তু সরকারিভাবে কোনো সহায়তা না পাওয়ায় আমরা নদী রক্ষায় ব্যর্থ। আমরা চাই তুরাগ নদ রক্ষা হোক। আমাদের এই নদ আমাদের জনপদের বেঁচে থাকার রসদ।

নদী ভাঙনে ভিটে হারা মানুষের ব্যাপারে কালিয়াকৈর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, যদি এমন কেউ থাকে যিনি নদী ভাঙনে ভিটা হারিয়েছে, তারা আমাদের কাছে আবেদন করলে সরকারের পক্ষ থেকে ভাতা প্রদান করা হবে। এছাড়া তারা যদি উপজেলা প্রশাসন বরাবর আবেদন করলে তাদের জন্য প্রকল্প অফিসের মাধ্যমে সহায়তা করার সুযোগ থাকতে পারে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ