ইসলামী ব্যাংকে ওএসডি ৪৯৫৩ জন, ছাঁটাই ২০০ কর্মী

চট্টগ্রাম ব্যুরো, এবিসি নিউজ, (৩০ সেপ্টেম্বর) : কোনো ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও পরীক্ষা ছাড়াই চাকরি পাওয়াদের মধ্য থেকে ৫ হাজার ৩৮৫ জনের যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ইসলামী ব্যাংকে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। শনিবার অনুষ্ঠিত মূল্যায়ন পরীক্ষায় ৪ হাজার ৯৫৩ জন অংশ না নেওয়ায় তাদের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এছাড়া চাকরি বিধি লঙ্ঘনের দায়ে ২০০ জনকে ছাঁটাই করা হয়েছে। এরপর গতপরশু রোববার ও গতকাল সোমবার চট্টগ্রামের পটিয়ায় বিক্ষোভ করেন একদল কর্মী। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।

ইসলামী ব্যাংকের বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষার উদ্যোগ বাতিল চেয়ে গত ২১ আগস্ট হাইকোর্টে একটি রিট করেন ব্যাংকটির চট্টগ্রামের চাক্তাই শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. জিয়া উদ্দিন নোমান। বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে নিষ্পত্তির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে গত ২৭ আগস্ট নির্দেশ দেন আদালত। এরপর গত ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিটকারীকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, ইসলামী ব্যাংক একটি বেসরকারি মালিকানাধীন লাভজনক প্রতিষ্ঠান। এর কর্মকর্তা–কর্মচারী নিয়োগ প্রচলিত আইন, বিধি–বিধান ও নিয়োগের শর্ত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কর্মদক্ষতার সঙ্গে ব্যাংকের লাভ–লোকসান অনেকাংশে জড়িত। ব্যাংক স্বাধীনভাবে দেশের আইন ও বিধি–বিধান মেনে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া এবং চাকরিতে কাউকে রাখা বা না রাখার বিষয়টি ব্যাংকের নিজস্ব এখতিয়ারভুক্ত। এই চিঠি ইস্যুর মাধ্যমে আবেদন নিষ্পত্তি করা হলো বলে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয় ব্যাংকের এমডি, হাইকোর্টের রেজিস্টার এবং আইনজীবী কে.এম. সাইফুল ইসলামকে।

জানতে চাইলে রিটকারী অফিসার মো. জিয়া উদ্দিন নোমান বলেন, ‘রিট নিষ্পত্তি হয়েছে কিনা জানি না। কয়েকজন আবেদনকারীর মধ্যে আমি একজন। বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠি পেয়েছি।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের  চিঠির পর আর কোনো উদ্যোগ নেবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেকে মিলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। কিছু ব্যক্তি এসব সিদ্ধান্ত নেন। তারাই ভালো বলতে পারবেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে পরে জানাতে পারব।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনার আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংককে একটি নির্দেশনা দিয়েছে। এখন যারা মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশ নেয়নি তাদের অনুপস্থিত দেখিয়ে ব্যাংক যদি কোনো ব্যবস্থা নেয় এবং কর্মীরা যদি আবার আদালতে যান তখন ব্যাংকের বলার সুযোগ থাকবে যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে এটি করা হয়েছে।’

ইসলামী ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংকের মোট কর্মকর্তা–কর্মচারীর সংখ্যা ২১ হাজার। এর মধ্যে ২০১৭ সাল থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট সময়ে নিয়োগ দেওয়া হয় প্রায় ১১ হাজার। এদের বেশিরভাগেরই মধ্যে কোনো ধরনের পূর্ব অভিজ্ঞতা, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এবং মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। এসব কর্মীর মধ্যে শুধু চট্টগ্রাম জেলার ৭ হাজার ২২৪ জন, যার মধ্যে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের উপজেলা পটিয়ার বাসিন্দা ৪ হাজার ৫২৪ জন। ওই সময় ইসলামী ব্যাংক এস. আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের দায়িত্বে থাকা ড. কামাল উদ্দীন জসীম বলেন, ‘নিয়োগ নীতিমালা অনুসরণ না করে ২০১৭ সাল থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত অনেককে নিয়োগ দেওয়া হয়। এমন কর্মীদের জন্য গত ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর মাধ্যমে মূল্যায়ন পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। অনেকেই সেই পরীক্ষায় অংশ নেননি। যারা অংশ নেয়নি তাদের ওএসডি করা হয়েছে। আর চাকরি বিধি লঙ্ঘন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় লেখালেখি করেছে এমন কিছু কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এসব কর্মীর অনেকের একাডেমিক সনদ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে সবার সনদ যাচাইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হলে বিজিসি ট্রাস্ট ও পোর্ট সিটি বিশ্ববিদ্যালয় তাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। জাল সনদের কারণে এরই মধ্যে অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।’

ইসলামী ব্যাংক গত ২৮ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়। সেখানে বলা হয়, ইসলামী ব্যাংক একটি শরীয়াহ কমপ্লায়েন্ট ব্যাংক। রাষ্ট্র ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার সকল নিয়ম পরিপালনের মাধ্যমে এ ব্যাংক পরিচালিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাংকে বিধিবহির্ভূত নিয়োগপ্রাপ্তরা সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তাতে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য গ্রাহক-শুভানুধ্যায়ীসহ সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হলো।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ