‘সি+’ গ্রেডের গভর্নর দিয়ে চলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক : গ্লোবাল ফাইন্যান্স

নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসিনিউজবিডি, (১৪ নভেম্বর) : বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ‘সি+’ গ্রেড পেয়েছেন। অর্থনৈতিক সাময়িকী গ্লোবাল ফাইন্যান্সের ২০২৫ সালের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরদের মূল্যায়নে তিনি এমন গ্রেড পেয়েছেন, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ রেটিং পেয়েছেন শ্রীলঙ্কার গভর্নর নন্দলাল উইরাসিংহে। তিনি পেয়েছেন ‘এ-’। দেশটিকে দেউলিয়া অবস্থা ও অতি মুদ্রাস্ফীতি থেকে উত্তরণে নেতৃত্ব দেওয়ায় তিনি এমন সাফল্য পেয়েছেন।

অন্যদিকে পাকিস্তানের জামিল আহমদ পেয়েছেন ‘বি-’, আর ভারতের সঞ্জয় মালহোত্রা ও নেপালের বিশ্বনাথ পাওডেলকে সাময়িকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘টিইটিএস’ (টু আরলি টু সে) হিসেবে অর্থাৎ তাদের পারফরম্যান্স মূল্যায়নের জন্য এখনো সময় প্রয়োজন। এ ছাড়া এই তালিকায় ডেনমার্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনামের কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধানরা পেয়েছেন সর্বোচ্চ ‘এ+’ গ্রেড।

গ্লোবাল ফাইন্যান্স জানায়, ২০২৪ সালের জুন মাস থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত কর্মনৈপুণ্যের ভিত্তিতে বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। ‘এ+’ থেকে শুরু করে ‘এফ’- এই মানদণ্ডে মূল্যায়ন করা হয়েছে। মূল্যায়নের মানদণ্ড হিসেবে যেসব বিষয় ধরা হয়েছে সেগুলো হলো- মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, প্রবৃদ্ধি অর্জন, মুদ্রার স্থিতিশীলতা, সুদহার ব্যবস্থাপনা ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সম্পর্কে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের আগস্টে গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন এমন এক সময়ে, যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাংক খাতের দুরবস্থা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতিতে অর্থনীতি টালমাটাল অবস্থায় ছিল। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি কঠোর করেন এবং নীতি সুদহার ৮ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করেন। এতে কিছুটা ফল মিললেও, প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে ২০২৫ অর্থবছরে জিডিপি ৩ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসে, যদিও ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।

গভর্নর মনসুর আইএমএফের সহায়তায় তিন বছরের ব্যাংক খাত সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। এতে খেলাপি ঋণ কমানো, দেউলিয়া আইন আধুনিকীকরণ এবং ব্যাংক পরিচালনায় জবাবদিহি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে বাস্তব অগ্রগতি ধীর, প্রয়োগে দুর্বলতা রয়ে গেছে।

গ্লোবাল ফাইন্যান্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, মনসুরের নীতি দিকনির্দেশনা ‘যুক্তিসংগত হলেও বাস্তবায়ন পিছিয়ে আছে’, ফলে জনগণের আস্থা এখনো ফিরে আসেনি।

অর্থনীতিবিদদের মতে, ‘সি+’ গ্রেড পাওয়া মানে হলো- মনসুরের নেতৃত্বে নীতিগত দিক সঠিক পথে থাকলেও এখনো কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন দৃশ্যমান নয়। মুদ্রাস্ফীতি, ঋণ অনিয়ম এবং ডলার বাজারে অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে না আসায় বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনো কঠিন পরীক্ষার মুখে।

তারা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এখন এমন এক গভর্নরের হাতে চলছে, যিনি কারিগরি দিক থেকে দক্ষ হলেও বাস্তব সংস্কার বাস্তবায়নে গতি আনতে পারছেন না। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহল দ্রুততর ও দৃশ্যমান সংস্কার ফলাফল দেখতে চায়, যাতে বাংলাদেশের অর্থনীতি আবার স্থিতিশীল পথে ফিরতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, সবকিছু ঠিকঠাক এগোলে বাংলাদেশ হয়তো সেই নিরবচ্ছিন্ন প্রবৃদ্ধির ধারা ফিরে পাবে।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিনের র‌্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের এভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। ১৯৯৪ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গভর্নরদের মূল্যায়ন করে আসছে গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিন। সাময়িকীটির বার্ষিক প্রকাশনা হিসেবে নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে ‘সেন্ট্রাল ব্যাংকার রিপোর্ট কার্ড’। এর আগে ২০২৩ সালে ড. মনসুরের পূর্বসূরি আবদুর রউফ তালুকদার পেয়েছিলেন ‘ডি’ গ্রেড।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ