দলের সংহতিতে দৃষ্টি বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসি নিউজ, (২৫ সেপ্টেম্বর) : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূলে দলীয় সংহতি বাড়াতে প্রতিটি আসনে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে চায় বিএনপি। এ জন্য আসনভিত্তিক একক প্রার্থী ঠিক করতে চাইছে দলটি। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রমে আরও গতি আনতে কাজ শুরু হয়েছে।

গত মঙ্গলবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দিলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আসনভিত্তিক এককপ্রার্থী চূড়ান্ত করতে তারেক রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

স্থায়ী কমিটির উভয় বৈঠক থেকে জানা যায়, ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫০ আসনে দলীয় প্রার্থিতা নিয়ে তেমন কোনো জটিলতা নেই। এই আসনগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীরা মোটামুটি নির্ধারিত। বাকি দেড়শ’ আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদেরও অর্ধশতাধিক আসনে ছাড় দেওয়ার চিন্তা করছে দলটি। গুরুত্বপূর্ণ নেতারা জানান, আগামী মাসের মাঝামাঝি দল ও জোটের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে চায় বিএনপির হাই কমান্ড।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে গত বছরের ৫ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে কাজ করছেন তারেক রহমান। এ পর্যন্ত তাঁর তত্ত্বাবধানে পাঁচটি জরিপও করা হয়েছে। সাংগঠনিক টিমের সদস্যদের মাধ্যমেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন। স্থায়ী কমিটির কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত সোমবার থেকে সম্ভব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে দেড়শ’ আসনে ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নেতাদের প্রার্থী করা হতে পারে। তাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন কিংবা বয়সের ভারে ন্যূজ- এমন আসনে নতুন প্রার্থীকে দল মনোনয়ন দেবে। এ ছাড়া বাকি দেড়শ’ আসনের মধ্যে ১০০ আসনে নতুন প্রার্থী আসবে। এ ক্ষেত্রে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই-সংগ্রাম বিশেষ করে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর-পরবর্তী আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পৃক্ত ত্যাগী, সততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, এলাকায় জনপ্রিয় ক্লিন ইমেজধারীরা প্রাধান্য পাবেন। এই বিবেচনায় মনোনয়নে এবার ‘চমক’ আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে সারাদেশে শতাধিক তরুণ প্রার্থীর ভাগ্য খুলে যেতে পারে।

সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি চালু এবং জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনের দাবিতে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে বিএনপিও নির্বাচনমুখী কামকান্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির দুই নেতা বলেন, সাত দলের আন্দোলন এবং এনসিপি নেতাদের বক্তব্যে নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের ষড়যন্ত্র দেখছেন তারা। এর মধ্যে এনসিপির এক নেতার বক্তব্যে দলটির ১৫০ আসন জয়ের কথায় এবং প্রশাসনে বিশেষ একটি দলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোতে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ইঙ্গিত দেখছেন তারা।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু আমাদের সময়কে বলেন, পিআর পদ্ধতির দাবি নির্বাচনকে প্রলম্বিত করার ষড়যন্ত্র। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশর চন্দ্র রায় বলেন, পিআর পদ্ধতি তো দেশের মানুষ বোঝে না, বুঝতে চায়ও না। যেটা দেশের মানুষ চায় না, সেটা বিএনপিও চায় না।

বিএনপি নেতারা জানান, জনগণকে নির্বাচনমুখী করতে তারা মানুষের ঘরে ঘরে অর্থাৎ ‘ডোর টু ডোর’ যাবেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা এ কাজে পুরুষের পাশাপাশি ব্যাপক পরিসরে দলের মহিলা নেতাকর্মীদেরও সম্পৃক্ত করবেন। এ জন্য দুই নারী নেত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, বৈঠকে হিন্দু সম্প্রদায়ের আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা নির্বিঘ রাখতে সহযোগিতা করার বিষয়ে দলীয় পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করা হয়। এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে গত ১৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয়ভাবে একটি মনিটরিং টিম গঠন করে বিএনপি; যেখানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রধান সমন্বয়ক এবং বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। এ ব্যাপারে জেলা ও মহানগর নেতাদের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, পূজায় পতিত স্বৈরাচারের অনুচরদের চক্রান্ত রুখতে স্থানীয়ভাবে দলীয় টিম গঠন করে কাজ করবে বিএনপি। বৈঠকে নিউইয়র্কে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি নেতাদের হেনস্থার নিন্দা জানানো হয়।

মহাসচিবের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট : বৈঠকে সম্প্রতি ভারতের একটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে নিজের বক্ত্য তুলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তাঁর বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেটি ডাহা মিথ্যা ও মনগড়া। তাঁর এ ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট বিএনপি।

সাক্ষাৎকার ইস্যুতে বিবৃতি : গতকাল বুধবার বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক বিবৃতি বলা হয়েছে- দলের মহাসচিবের নামে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারটি ডাহা মিথ্যা ও মনগড়া। দলের মহাসচিব কোনো বিদেশি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেননি উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়- উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দল ও মহাসচিবের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার জন্য কল্পনাপ্রসূত সাক্ষাৎকারটি প্রচার করা হয়েছে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ