ডেঙ্গু নাকি চিকুনগুনিয়া? লক্ষণ দেখে চিনবেন যেভাবে
নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা), এবিসি নিউজ, (১৮ সেপ্টেম্বর) : বর্ষা ও শরৎকালে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। দুটি রোগেরই বাহক এডিস মশা এবং অনেক ক্ষেত্রে লক্ষণগুলোও প্রায় একই রকম। ফলে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। তবে কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ দেখে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মধ্যে পার্থক্য করা সম্ভব।
ডেঙ্গু জ্বর
ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে সাধারণত হঠাৎ করে তীব্র জ্বর আসে। এর প্রধান লক্ষণগুলো হলো:
তীব্র জ্বর: ১০২ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বর হতে পারে।
মাথাব্যথা: কপালে এবং চোখের পেছনে প্রচণ্ড ব্যথা।
মাংসপেশি ও জয়েন্টে ব্যথা: সারা শরীরে, বিশেষ করে পেশি ও হাড়ে তীব্র ব্যথা হয়, যা ‘হাড়ভাঙা জ্বর’ নামে পরিচিত।
ত্বকে র্যাশ: জ্বরের ৪-৭ দিনের মধ্যে ত্বকে লালচে ফুসকুড়ি বা র্যাশ দেখা যেতে পারে।
বমি বমি ভাব বা বমি: হজমে সমস্যা হতে পারে।
রক্তক্ষরণ: গুরুতর ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে দাঁতের মাড়ি, নাক বা প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তপাত হতে পারে।
চিকুনগুনিয়া জ্বর
চিকুনগুনিয়ার মূল বৈশিষ্ট্য হলো প্রচণ্ড অস্থিসন্ধির ব্যথা। এর লক্ষণগুলো হলো:
উচ্চ তাপমাত্রা: ডেঙ্গুর মতোই উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর আসে, তবে তা সাধারণত ২-৩ দিনের মধ্যে কমে যায়।
তীব্র অস্থিসন্ধির ব্যথা: এটি চিকুনগুনিয়ার সবচেয়ে বড় লক্ষণ। হাতের আঙুল, কবজি, গোড়ালি, হাঁটু এবং অন্যান্য অস্থিসন্ধিতে অসহনীয় ব্যথা হয়, যা কয়েক সপ্তাহ এমনকি মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
শরীরজুড়ে ব্যথা: মাথা ও পেশিতে ব্যথা হয়, যা ডেঙ্গুর চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম তীব্র।
ত্বকে র্যাশ: জ্বরের ২-৫ দিনের মধ্যে শরীরে লালচে র্যাশ দেখা যায়।
চোখে প্রদাহ: চোখে ব্যথা বা লালভাব দেখা যেতে পারে।
বমি বমি ভাব: এটি মাঝে মাঝে হতে পারে।
মূল পার্থক্য
লক্ষণগুলোর মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো ব্যথার ধরন ও তীব্রতা। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে মাংসপেশি ও হাড়ে তীব্র ব্যথা হয়, যা জ্বর কমার পর অনেকটাই কমে আসে। অন্যদিকে, চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে অস্থিসন্ধিতে অসহ্য ব্যথা হয়, যা জ্বর সেরে গেলেও দীর্ঘ সময় ধরে থাকে।
চিকিৎসকের পরামর্শ
এই লক্ষণগুলোর কোনোটি দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। তিনি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে পারবেন কোন রোগে আপনি আক্রান্ত। উভয় ক্ষেত্রেই প্রচুর পরিমাণে তরল পান করা এবং সম্পূর্ণ বিশ্রাম নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। অবহেলা করলে ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া উভয়ই মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।