গঙ্গাচড়ায় তিস্তা সেতুরক্ষা বাঁধ ভেঙে ৭০ মিটার নদীগর্ভে

নিজস্ব প্রতিবেদক (রংপুর), এবিসি নিউজ, (১৮ সেপ্টেম্বর) : রংপুরের গঙ্গাচড়ায় উজানের পাহাড়ি ঢলের তীব্র স্রোতে তিস্তা সেতুরক্ষা বাঁধের প্রায় ৭০ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এই বাধের দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০০ মিটার। এতে হুমকিতে পড়েছে দ্বিতীয় তিস্তা সেতু এবং রংপুর-লালমনিরহাট আঞ্চলিক সড়ক।

এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ চলাচল করেন। বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে গেলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। আশেপাশের চরাঞ্চলের কয়েকটি গ্রাম এখন ভাঙনের শঙ্কায় রয়েছেন। ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০০ পরিবার।

২০১৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ১২১ কোটি টাকা ব্যয়ে মহিপুরে তিস্তা নদীর উপর দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ করে। তবে চলতি বছরের আগস্টে উজানের ঢলের কারণে বাঁধের নিচের মাটি ভেসে ব্লকগুলো ধসে পড়ে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (১৮ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার) ৭০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

মহিপুর এলাকার বাসিন্দা আফসারুল ইসলাম বলেন, ‘এ বাধের মা-বাপ নাই। সেই দুই-তিন মাস ধরে নিচের ব্লক ধসে যাচ্ছে। সে ব্যাপারে কারো কোনো উদ্যেগ নেই।’

সেতু এলাকার বাসিন্দা আজিবর রহমান বলেন, ‘প্রথমে ছোট ফাটল ছিল। ৪-৫ মাস ধরে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এবার তিস্তার পানি বাড়ায় বাঁধের বিশাল অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।’

লহ্মীটারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, ‘আমি যখন বাঁধের ক্ষতির বিষয়টি এলজিইডিকে জানিয়েছিলাম, তারা মেরামতের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ভারত থেকে পানি হুহু করে ঢুকছে। পুরো বাঁধ ভেঙে গেলে সেতু, প্রধান সড়ক এবং চরাঞ্চলের গ্রামগুলো বিপদে পড়বে। আমাদের গ্রামবাসীরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।’

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, ‘তিস্তা সেতু রক্ষা বাঁধের ভাঙনের বিষয়টি ডিসি স্যার এবং যেহেতু এলজিইডি এটি নির্মাণ করেছিল, তাই এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে। তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন। বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘যে জায়গা ভাঙন হচ্ছে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ফলে রক্ষণাবেক্ষণের কাজে হাত দেওয়া হচ্ছে না।’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুসা বলেন, ‘আমরা পরিদর্শন করেছি। আমরা বিষয়টি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে বৈঠকে বসেছি। ঢাকায়ও জানানো হয়েছে। বর্তমানে পানি অনেক বেশি থাকায় পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। পানি কমলেই দুএক দিনের মধ্যেই ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ