চট্টগ্রাম বন্দরে ২৫ শতাংশ কনটেইনার নিলামযোগ্য

চট্টগ্রাম ব্যুরো, এবিসিনিউজবিডি, (২৭ অক্টোবর) : চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ড থেকে কোনোভাবে কমানো যাচ্ছে না নিলাম কনটেইনার। নিয়মিত নিলাম ও ধ্বংস কাজ চলমান থাকলেও উল্টো বেড়ে যাচ্ছে নিষ্পত্তিযোগ্য কনটেইনারের সংখ্যা। এটি নিয়মিত মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। গতকাল রবিবার পর্যন্ত বন্দরের ইয়ার্ড জমা থাকা কনটেইনারের ২৫ শতাংশ নিলামযোগ্য, যা বন্দরের মোট ধারণ ক্ষমতার প্রায় ২০ শতাংশ জায়গা দখল করে আছে।

জানা গেছে, দিন দিন বাড়ছে নিলামযোগ্য কনটেইনারের সংখ্যা। সঠিক সময়ে নিলাম না হওয়ায় বা নিলামের ধীরগতির কারণে এসব কনটেইনারের বাড়ছে। নিলাম না হওয়ায় ইয়ার্ড খালি করা যাচ্ছে না। এতে চরম চাপে রয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। অথচ নিলাম কনটেনারের দখলে থাকা এই ২০ শতাংশ জায়গায় নতুন কনটেইনার রাখা যেত। এতে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাড়ত।

বন্দরের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, রবিবার পর্যন্ত বন্দরে ইয়ার্ডে জমা আছে নিলামযোগ্য ১০ হাজার ৩৩৪ টিইইউএস (২০ ফুট সমমানের) কনটেইনার। বন্দরের ৫৯ হাজার টিইইউএস ধারণ ক্ষমতার ইয়ার্ডে ৪২ হাজার ১৮৪ টিইইউএস কনটেইনার জমা আছে। এর মধ্যে নিলাম কনটেইনার ২৫ শতাংশ। এসব কনটেইনারে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার পণ্য জমা রয়েছে। অথচ সঠিক সময়ে নিলাম করা গেলে ওই পরিমাণ পণ্যের টাকা সরকার রাজস্ব পেত।

বন্দর কর্মকর্তারা জানান, নিলামযোগ্য কনটেইনারের কারণে ১৫০ কোটি বকেয়া ভাড়া আটকে রয়েছে বন্দরের। নিলামযোগ্য কনটেইনার দ্রুত সরানো গেলে বন্দরের কনটেইনার জট কেটে যেত। এ ছাড়া এসব কনটেইনারের কারণে আমদানি-রপ্তানির স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) মোহাম্মদ এনামুল করিম বলেন, ‘বন্দরের ১০ হাজার ৩৩৪ টিইইউএস নিলাম কনটেইনার পড়ে আছে। কাস্টম হাউসকে বার বার তাগাদা দিই নিলাম দ্রুত করার জন্য। এ ছাড়া ধ্বংস করা কনটেইনারগুলো দ্রুত সরানোর জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু কার্যত কোনো কাজই হয়নি। নিলাম ধীরগতির কারণে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে বন্দরকে।’

চট্টগ্রাম কাস্টমসের বিডার (নিলামকারী) মোহাম্মদ ইয়াকুব চৌধুরী বলেন, ‘নিলাম দ্রুত হলে সবার লাভ। সরকার রাজস্ব পায়, আমরা লাভ পাই। নিলাম দ্রুত না হওয়ায় সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। অনেক পচনশীল পণ্য যেমন আপেল, কমলা, আদা, পেঁয়াজ, রসুনসহ ভোগ্যপণ্য নষ্ট হয়ে যায়। অথচ সঠিক সময়ে নিলাম হলে রাজস্ব পাওয়া যেত। এ ধরনের শত শত কনটেইনার পড়ে রয়েছে নিলামযোগ্য। কাস্টমসের উচিত আগের নিলামযোগ্য পণ্য চালানগুলো নিলামে তোলা। ধ্বংসযোগ্য পণ্য চালান ধ্বংসের উদ্যেগ নেওয়া।’

কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার নিলাম মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ বলেন, ‘যেকোনো পণ্য চালান বন্দরে আসার পর ৩০ দিনের মধ্যে খালাস না করলে নিলামযোগ্য পণ্য হিসেবে বিবেচনা হয়। আবার এ সময় বাড়িয়ে নিতেও পারেন আমদানিকারকরা। নিলামে তোলা পণ্যের ক্ষেত্রে নিলাম মূল্যের বা লটের নির্ধারিত মূল্যের ৬০ শতাংশ পূরণ হওয়ার একটি বিধান রয়েছে। এটা পূরণ না হলেও আমরা পণ্য চালান ছাড় দিতে পারি না। আবার অনেক পণ্য চালানে মামলা করে দেন আমদানিকারকরা। এটাও নিলাম হওয়া থেকে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।’

তিনি জানান, আগামী সপ্তাহে ১৫০টি কনটেইনারে প্রায় ২৫০ টিইইউএস নিলামে তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে কাপড়, সুতা, মেশিনারি, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পণ্য রয়েছে। এ ছাড়া বিপজ্জনক ১৯ কনটেইনারে প্রায় ৩০ টিইইউএস ধ্বংস করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের স্বার্থে চট্টগ্রাম বন্দরকে স্বাভাবিক ও সচল রাখতে হবে। শুনেছি, ২০ বছরের পুরোনো কনটেইনারও বন্দরে পড়ে রয়েছে। সেসব কনটেইনার খুঁজে দ্রুত নিষ্পত্তি করা জরুরি।’

বাংলাদেশ শিপিং অ্যাজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান ছৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘১০ হাজারের ওপর নিলাম কনটেইনার বন্দরের ইয়ার্ড দখল করে রেখেছে। এটা কোনো মানে হয় না। বিশ্বের কোনো বন্দরে দেখিনি বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারি দিতে। কিন্তু আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারি হয়। এতে বন্দরের চাপ বেড়ে যায়, কনটেইনার জট হয়। বেসরকারি ডিপোকে যথাযত ব্যবহার করতে হবে, ডিপোর সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। তখন কনটেইনার জট হোক, নিলাম কনটেইনার পড়ে থাক, তা ডিপোতে থাকবে, বন্দরের সমস্যা হবে না। কাস্টমসের উচিত দ্রুত নিলাম করা, না হয় ধ্বংস করা।’

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ