ইলিশ কেনাবেচায় সরগরম চাঁদপুরের মাছঘাট

নিজস্ব প্রতিবেদক (চাঁদপুর), এবিসিনিউজবিডি, (২৬ অক্টোবর) : নদীতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় আবারও ইলিশ মাছ বেচাকেনায় সরগরম হয়ে উঠেছে চাঁদপুরের হাট বাজারগুলো। ইলিশ প্রজনন মৌসুমের নিষেধাজ্ঞা শেষে মাছের ঘাটগুলো সরব হয়ে উঠছে। প্রাণচাঞ্চল্য ফিরছে মাছের বাজারগুলোয়।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাত থেকেই নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ইলিশ ধরতে নদীতে নামেন জেলেরা।

রোববার (২৬ অক্টোবর) চাঁদপুরের ইলিশ বেচাকেনার স্থান বড় স্টেশন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, ভোর থেকেই ইলিশ বেচাকেনাকে ঘিরে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। তুলনামূলক বড় ইলিশ না পাওয়া গেলেও নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার প্রথম দিনেই ছোট ও মাঝারি সাইজের ইলিশে সয়লাব বাজার। যদিও মেঘনা নদীর চেয়ে চাঁদপুরের পদ্মা নদীর ইলিশ বেশি সুস্বাদুর খ্যাতি হওয়ায় জেলেরা নদীতে জাল নিয়ে বেশি সময় কাটাচ্ছেন। বাজারে ১ কেজি ওজনের ইলিশ ও ছোট আকারের মাছই বেশি। যেখানে ১ কেজি ওজনের পদ্মা-মেঘনার ইলিশ ২২০০ থেকে ২৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যেগুলোর মণ ৯০ হাজার টাকার মতো।

ইলিশ বিক্রেতা সম্রাট বলেন, ইলিশ কম পাওয়া যাচ্ছে। যে কারণে ছোট সাইজের ইলিশ প্রতি হালি (২০০ গ্রাম ওজন) বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম বা এক ওজনের ইলিশ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা। এক কেজির বেশি অর্থাৎ বড় আকারের মাছের দাম ওজন অনুযায়ী বাড়ে।

জেলে কাদির বলেন, মেঘনা নদীর ইলিশের সাইজ ছোট। তাই গভীরতম পদ্মা নদীতে নৌকা নিয়ে বেশি সময় কাটালাম। তবুও বড় ও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাইনি। মাঝারি আকারের ১২টা ইলিশ পাইছি। এগুলো দিয়ে তেল খরচ পোষাতে কষ্ট হয়ে যাবে।

আড়তদার ঈসমাইল বলেন, ইলিশের দাম কমাতে নদীর সংরক্ষণ প্রয়োজন। তাই অচিরেই ইলিশের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিতে নদী খননের পরামর্শ রইল। নদীতে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধেও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। তাহলে সাগরের ইলিশ বেশি করে নদীতে আসবে।

অনলাইনে ইলিশ বিক্রেতা সজীব বলেন, ইলিশের বেশ কিছু অর্ডার পেয়েও নিষেধাজ্ঞায় দিতে পারিনি। এখন আশা করছি সব অর্ডার ডেলিভারি দিতে পারব। তবে আগের মতোই দাম ওঠানামা শুরু হয়ে গেছে।

ইলিশ মাছ কিনতে আসা সফিক নামের একজন বলেন, নদীতে নিষেধাজ্ঞাই কেবল নয় বরং নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়েও ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। কেননা নিষেধাজ্ঞার পরও অপরিবর্তিত ইলিশের বাজার। বরং নিষেধাজ্ঞার আগে ১ কেজি ওজনের ইলিশ ২০০০ থেকে ২১০০ টাকা দিয়ে কিনলেও এখন সেটা ২২০০ থেকে ২৩০০ টাকা। এতে সাধারণ মানুষের কোনো লাভ নাই।

চাঁদপুর মৎস্য সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত সরকার বলেন, প্রাকৃতিক মাছ ইলিশ আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে জেলের জালে কম বেশি ধরা পড়ে। তাই সামনে ভালো সিজন আসছে ইলিশের। তখন দাম কমবে বলে প্রত্যাশা রাখছি। তবে এবারের নিষেধাজ্ঞার পর ভালো পরিমাণ ইলিশ ঘাটে আসতে শুরু করেছে। এভাবে আরও কয়েকদিন চললে দাম প্রতি কেজি ২০০/৩০০ করে কমে যাবে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, অভিযানের দিনগুলোতে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফলভাবে বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর, নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসন সমন্বিতভাবে নদীতে কাজ করেছে। বিভিন্ন সময়েই অভিযানে অবৈধ জাল জব্দ করা, অসাধু জেলেদের আটক করে মামলা ও জেল-জরিমানাসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জেলে ও মৎস্যজীবীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছি। এমনকি নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের জন্য ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় খাদ্য সহায়তাও দেওয়া হয়েছে। আশা করছি এবারের সফল অভিযান হওয়ায় জেলেরা বড় বড় ইলিশ নদীতে পাবে। তবে ইলিশের দাম ক্রেতাদের নাগালে রাখতে তা মনিটরিংয়ে আমরা সর্বদা হাটবাজারগুলোতে নজরদারি রাখব।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ