‘করোনা’ মায়ের প্রতি সন্তানের নিষ্ঠুরতা

জেলা প্রতিনিধি (বরিশাল) এবিসিনিউজবিডি, ঢাকা ১৭ জুন ২০২০) : করোনা আক্রান্ত হয়েছেন কি-না, তা না জেনেও এমন সন্দেহে দশমাস দশদিন পেটে রাখা এক সন্তান তার মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। অনাহারে অসুস্থ হয়ে পড়া এই মাকে মন্দির থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে স্থানীয় থানা প্রশাসন। হৃদয় বিদারক এই ঘটনা ঘটেছে বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার বারপাইকা গ্রামে।

জানা গেছে, বারপাইকা গ্রামের জ্ঞানদা ব্যাপারী (৯৫) তার স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই থাকতেন ছেলে জগদীশ ব্যাপারী (৪০) ও ছেলের বউ শিখা রানীর (৩৫) কাছে। তার নামে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড আছে। ছেলে জগদীশ ব্যাপারী ওই কার্ডের টাকা তুলে ভোগ করেন।

করোনায় সংক্রমিত সন্দেহে জ্ঞানদা ব্যাপারীকে ঘর থেকে বের করে দেন ছেলে ও ছেলের বউ। দুই মাস ধরে বসতঘরের বাইরে একটি মন্দিরে রাখা হয়েছিলো তাকে। সম্প্রতি ছেলের বউয়ের কাছে খাবার আর বয়স্ক ভাতার টাকা চাওয়ায় জ্ঞানদা ব্যাপারিকে শারীরিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।

বিভূতি মণ্ডল, বাসুদেব সরকারসহ জ্ঞানদা ব্যাপারীর কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, বয়সের কারণে হাঁচি-কাশি হওয়ায় করোনা সন্দেহে ছেলে ও ছেলের বউ জ্ঞানদা ব্যাপারীকে বাড়ির সামনে বারপাইক্কা মন্দিরের বারান্দায় থাকতে দেন। তাকে ঠিকমতো খাবারও দেওয়া হয় না। খাবার ও পরিচর্যার অভাবে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গত ১৫ জুন (সোমবার) বিকেলে জ্ঞানদা ব্যাপারী তার ছেলের বউ শিখা রানীর কাছে খাবার চান। খাবার না দিলে তিনি বয়স্ক ভাতার টাকা ফেরত চান। এতেই শিখা রানী ক্ষিপ্ত হন। একপর্যায়ে জগদীশ ব্যাপারী ও শিখা রানী মিলে টানাহেঁচড়া ও মারধর শুরু করেন। এতে জ্ঞানদা ব্যাপারীর শরীরে জখম হয়।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, জ্ঞানদা ব্যাপারীর সঙ্গে এমন আচরণের প্রতিবাদ করতে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে জগদীশ ও তার স্ত্রী তাদের গালিগালাজ করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। অভিযোগের বিষয়ে জগদীশ ব্যাপারী ও তার স্ত্রী শিখা রানী বলেন, বিষয়টি তাদের পারিবারিক। নিজেরাই এর সমাধান করবেন।

আগৈলঝাড়া থানার ওসি অফজাল হোসেন আজ (১৭ জুন) এই প্রতিবেদককে বলেন, বৃদ্ধ জ্ঞানদা ব্যাপারীকে উদ্ধার করে চিকিৎসা, খাবার ও ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ