পুলিশ এখনো কথা বলেনি

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: বনানীতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি শাফাত আহমেদ বাসায় আছেন। তাঁর সঙ্গে পুলিশ এখনো কোনো কথা বলেনি। শাফাতের বাবা ও আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ আজ সোমবার মুঠোফোনে এ কথা জানান।

দিলদার আহমেদ বলেন, ‘‌‌পুলিশ আমাদের বাসায় এসেছিল। কথাবার্তা বলেছে। তারা তদন্ত করে দেখছে।’ ধর্ষণ মামলার আসামি হওয়ার পরও ছেলেকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন না কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‌পুলিশ তদন্ত করছে। প্রমাণ না পেলে কীভাবে ধরবে?’

২৪ বছর বয়সী শাফাত আহমেদ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনায় স্নাতক পাস করে পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা করে আসছেন। দিলদার আহমেদের দাবি, তাঁর ছেলে মা-বাবাকে না জানিয়ে বছর দু-এক আগে বিয়ে করেন। দুই মাস আগে তাঁদের বিচ্ছেদ ঘটে। জন্মদিনের পার্টিতে তাঁর ছেলের সাবেক স্ত্রী ওই দুজন মেয়েকে পাঠিয়েছিল বলে সন্দেহ করছেন তিনি।

বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল মতিন গত শনিবার যা বলেছিলেন, তার সঙ্গে দিলদার আহমেদের কথার মিল রয়েছে। বনানী থানার ওই কর্মকর্তা ওই দিন নির্যাতনের শিকার হওয়া শিক্ষার্থীদের কাছে একই ধরনের বক্তব্য দেন এবং মামলা নিতে গড়িমসি করেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নাম এবং ছবি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। পাশাপাশি ওই শিক্ষার্থীদের সুবিচার না পাওয়ার আশঙ্কা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। এরপরও মামলাটি বনানী-থানা পুলিশই তদন্ত করছে।

আজ সোমবার দুপুরের দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা শেখ নাজমুল আলম বলেন, তাঁরা ছায়া তদন্ত করছেন। আসামিদের অবস্থান সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন।

গত শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বনানী থানার পুলিশ ধর্ষণের মামলা নেয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রভাবশালী হওয়ায় মামলা করতে দুই ছাত্রীকে টানা ৪৮ ঘণ্টা যুদ্ধ করতে হয়।

হয়রানি বাড়াতে মেডিকেল পরীক্ষার নামে দুই ছাত্রীকে দীর্ঘ সময় থানায় বসিয়ে রাখা হয়। রাত ১০টার দিকে তাঁদের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়।

শনিবার মামলার বাদী বলেন, তাঁদের পুরোনো এক বন্ধু প্রধান আসামির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। পরিচয়ের সপ্তাহ দু-এক পর গত ২৮ মার্চ তাঁদের দুজনকে ওই আসামি তাঁর জন্মদিনের পার্টিতে দাওয়াত করেন। অনেক অনুরোধের পর তাঁরা ওই পার্টিতে যান। পার্টি ছিল বনানীর একটি চার তারকা হোটেল ও রেস্তোরাঁয়। ওই পার্টিতে ওই দুই শিক্ষার্থীর পুরোনো বন্ধুও ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে তাঁদের ফেলে ওই বন্ধু চলে যান। আসামিরা তখন তাঁদের হোটেলের দুটি কক্ষে আটকে ফেলেন। সে সময় আসামিদের সঙ্গে দেহরক্ষী ও গাড়িচালক ছিলেন। প্রধান আসামি ও তাঁর এক বন্ধু ওই দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। অভিযোগকারী শিক্ষার্থী দাবি করেন, তাঁদের ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করেন আসামির গাড়িচালক।

এক মাসের বেশি সময় পর কেন মামলা করলেন, জানতে চাইলে অভিযোগকারী বলেন, লোকলজ্জার ভয়ে তাঁরা বিষয়টি চেপে গিয়েছিলেন। ধর্ষণের পর আসামি তাঁকে (বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী) প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরে প্রধান আসামির দেহরক্ষী তাঁকে অনুসরণ করছিলেন। তাঁদের বাসায় গিয়েও নানান কিছু জিজ্ঞাসা করছিলেন। আসামি ভিডিও আপলোড করারও হুমকি দিচ্ছিলেন। সে কারণে তাঁরা থানায় যান।

এজাহার থেকে জানা যায়, ওই মামলার আসামিরা হলেন শাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, শাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও অজ্ঞাতনামা দেহরক্ষী। মামলার প্রধান আসামি শাফাত।

গতকাল রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই দুই ছাত্রীর শারীরিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ওই দিন হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ জানিয়েছিলেন, পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন করে দুই ছাত্রীর শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে ১৫-২০ দিন সময় লাগবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ