স্বপ্নের পদ্মা সেতুর রঙ কেমন হবে ?

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: পদ্মার বুকে এ দেশের কোটি কোটি মানুষের আশার সেতু গড়ে উঠছে, যার নাম পদ্মা সেতু। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হবে। এখন থেকেই পদ্মা পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন অনেকে। তবে স্বপ্নের সেই সেতুর রং কেমন হবে? কেউ ভাবছেন রং হবে ধূসর, কেউবা ভাবছেন রং হবে কালো। না, এর কোনোটিই নয়। সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা সেতুর রং হবে সোনালি।
সোনালি সেতু গড়ার কাজ এক মুহূর্ত থেমে নেই। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া আর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে এ জন্য হাজারো শ্রমিকের দম ফেলার সময় নেই। তাঁদের ঘামঝরানো শ্রমে এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতু। যতই দিন যাচ্ছে, দৃষ্টির ভেতরে চলে আসতে শুরু করেছে সেতুর কাঠামোগুলো। যেখান দিয়ে যানবাহন ও ট্রেন চলবে, সেই স্প্যানগুলোর বেশ কটি তৈরি হওয়ার পথে। এ রকম ৪১টি স্প্যান স্থাপন করা হবে পদ্মা সেতুর পিয়ারের (পিলার) ওপর। দুটি স্প্যান প্রস্তুত হওয়ার পথে। কিছুটা সোনালি, কিছুটা হলদে রঙের। একটি স্প্যান তো পুরোপুরি প্রস্তুত করে রাখা আছে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অ্যাসেম্বলি ওয়ার্কশপের সামনে খোলা জায়গায়।
অ্যাসেম্বলি ওয়ার্কশপের সামনে দাঁড়ালে মনে হবে, প্রস্তুত হওয়া স্প্যানটি যেন একটি সেতু। সেখানে কিছু সময় থাকলে পদ্মা সেতুর একটি কাল্পনিক চিত্র মনের অন্তরালে উঁকি দেবে।
গত ২৭ ডিসেম্বর সরেজমিনে পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কংক্রিটের তৈরি স্তম্ভের ওপর প্রস্তুত হওয়া স্প্যানটি অস্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে। পৌষের রোদমাখা শীতে সূর্যের আলো পড়ায় সোনারঙের স্প্যানটি জ্বলজ্বল করছিল।
পিয়ার তৈরি হলেই সেতু গড়ার কাজের গতি আরও বেড়ে যাবে। পিয়ারের ওপর ক্যাপ বসিয়ে তার ওপর একেক করে একেকটি স্প্যান স্থাপন করা হবে। এর মাঝখানে হবে রেলপথ। এর ওপরে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে করা হবে যানবাহনের চলাচলের পথ। স্প্যান স্থাপনের জন্য বিশাল একটি ক্রেনও চলে এসেছে গত নভেম্বর মাসে।
সাদা রঙের এই ক্রেনকে ভেসে থাকতে দেখা গেছে মাওয়ায় পদ্মাপাড় থেকে মাইল খানেক দূরে। ক্রেনটি দেখতে সুউচ্চ একটি ভবনের মতো। স্পিডবোটে কাছে গেলে ক্রেনের শক্তি-সামর্থ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ক্রেনের মধ্যে আছে চারতলার ভবন। ভবনটি অনেকটা হালকা নীল রঙের। এই ভবন থেকেই ক্রেনটি পরিচালনা করা হয়, যে কাজটি করবেন চীনের প্রকৌশলীরা।
তৈরি হওয়া স্প্যানগুলোকে পদ্মার পানিতে ভাসিয়ে নেবে সাড়ে তিন হাজার মেট্রিক টন ওজনের এই ক্রেন। তারপর নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে উঁচু করে পিয়ারের ক্যাপের ওপর বসিয়ে দেবে একটি করে স্প্যান। মূল সেতুতে ২৪০টি পিয়ার আর দুই পাড়ে ১৬টি করে ৩২টি পিয়ার তৈরি করা হবে। এর মধ্যে মূল সেতুর ৩৬টি ও দুই পাড়ের দুটি পিয়ার বসানো হয়ে গেছে।
পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, স্টিল দিয়ে করা হয়েছে স্প্যান। স্প্যানের বিম তৈরি করা হচ্ছে চীনের শিং হোয়াং দাও নামের একটি শহরে। সেখান থেকে বিমগুলো সাগর পাড়ি দিয়ে জাহাজে করে আনা হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরে। বন্দর থেকে সোজা পদ্মার অ্যাসেম্বলি ওয়ার্কশপে। এই ওয়ার্কশপের চীনা প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে বিম সংযোজন করে স্প্যান প্রস্তুত করা হচ্ছে।
প্রস্তুত হওয়া স্প্যানটি ১৫০ মিটার দীর্ঘ, ১২ মিটার প্রশস্ত। এই ১২ মিটারের ওপর কংক্রিটের ২২ মিটারের ডেক বসানো হবে। এই তো কয়েক দিন আগে প্রস্তুত হওয়া স্প্যানটির ওপর দুই হাজার মেট্রিক টন ওজন বসিয়ে লোড টেস্ট বা ওজন পরীক্ষা করানো হয়েছে।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (সেতু) দেওয়ান মো. আবদুল কাদের বলেন, এমনভাবে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে যে একটি স্প্যান অন্য স্থানে স্থাপন করা যাবে না। এমনকি এর একটি নাটবল্টু অন্য জায়গায় বসিয়ে দেওয়া যাবে না। প্রতিটি স্প্যানেরই আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কারণ, পদ্মা সেতুটি দেখতে হবে ইংরেজি বর্ণ ‘এস’-এর আদলে।
শুরুতেই বলা হয়েছিল, পুরো পদ্মা সেতুর রং হবে সোনালি রঙের। কারণ হিসেবে দেওয়ান আবদুল কাদের বলেন, সেতুটির কাঠামোর বড় একটি অংশ স্টিল ও লোহার তৈরি। বেশি তাপ পড়লে এর কাঠামোর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। সোনালি রং সূর্যের অধিক তাপ শোষণ করে না। তাই পদ্মা সেতুর রং হবে সোনালি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ