রক্তাল্পতায় ভোগা মানুষ কানে কম শোনে

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: রক্তাল্পতা ও শ্রবণ সমস্যার মধ্যে সম্পর্ক আছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে, লোহার ঘাটতিজনিত রক্তাল্পতায় ভোগা মানুষ কানে কম শোনে। গবেষকেরা বলছেন, রক্তাল্পতা দ্রুত চিহ্নিত ও চিকিৎসা করা গেলে হয়তো শ্রবণ সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব।
ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে আনুমানিক ১ দশমিক ৬ শতাংশ বয়স্ক মানুষ শ্রবণ সমস্যায় আক্রান্ত। এদের একটি অংশ মধ্য কানের হাড়ের সমস্যার কারণে কম শোনে (কমবাইন্ড হেয়ারিং লস)। অন্য অংশটি স্নায়বিক কারণে কানে কম শোনে, জন্মত্রুটির কারণেও এটা হতে পারে। অন্যদিকে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ বয়স্ক মানুষ রক্তাল্পতায় আক্রান্ত।
গবেষণা ফলাফলকে বাংলাদেশের নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ও পুষ্টিবিদেরা গুরুত্বপূর্ণ বলেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, রক্তে লোহার পরিমাণ কম থাকলে রক্ত অক্সিজেন কম বহন করে। রক্তে অক্সিজেন কম থাকলে শ্রবণ ইন্দ্রিয়গুলো স্বাভাবিক কাজ করে না। এটাই কানে কম শোনার অন্যতম কারণ।
বাংলাদেশে কত মানুষ শ্রবণ সমস্যায় ভুগছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, জন্মগত ত্রুটি, কানের পর্দায় ফুটো, মুঠোফোনের যথেচ্ছ ব্যবহার, ডায়াবেটিস, শব্দদূষণ এবং রক্তস্বল্পতার কারণে মানুষ শ্রবণ সমস্যায় ভুগছে। কমপক্ষে ২০ শতাংশ মানুষের এ সমস্যা আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক নাজমা শাহীন জাতীয় জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের ৭ শতাংশ মানুষ লোহাজনিত রক্তাল্পতায় ভুগছে। গ্রামে ও শহরে এই হার যথাক্রমে ৬ ও ১০ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বস্তিতে, ১৪ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রে ২১ থেকে ৯০ বছর বয়সী ৩ লাখ ৫ হাজার ৩৩৯ জন মানুষের ওপর এই গবেষণা হয়েছে ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ১ অক্টোবর পর্যন্ত। এর মধ্যে ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ ছিল পুরুষ। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সাধারণ মানুষ, রক্তাল্পতায় ভোগা মানুষ ও শ্রবণ সমস্যায় ভোগা মানুষ অন্তর্ভুক্ত ছিল। গবেষকেরা তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, লোহাজনিত রক্তাল্পতায় ভোগা মানুষের মধ্যে শ্রবণ সমস্যা বেশি। গবেষণাটি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি কলেজ অব মেডিসিন। গবেষণা ফলাফল ২৯ ডিসেম্বর আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের অটোর্যারিঙ্গোলোজি-হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি সাময়িকীর অনলাইন সংস্করণে ছাপা হয়েছে।
গবেষকেরা বলেছেন, লোহাজনিত রক্তাল্পতার সঙ্গে শ্রবণ সমস্যার সম্পর্ক আছে এটা এই গবেষণা থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এখন দেখা দরকার রক্তাল্পতা দ্রুত শনাক্ত ও চিকিৎসা করলে তার প্রভাব শ্রবণ সমস্যায় থাকা মানুষের কতটা উন্নতি হয়।
অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, এ দেশের মানুষ প্রাণিজ খাদ্য (মাছ, মাংস) থেকে লোহা কম পায়। অন্যদিকে গর্ভবতী মায়েদের বড় অংশ রক্তাল্পতায় ভোগে, এর প্রভাব পড়ে গর্বের শিশুর ওপর। নীতিনির্ধারকদের এসব দিকে নজর দিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ