খালেদা জিয়ার ঘুম ভাঙাতে এসেছি: নৌমন্ত্রী

shahjahan-khan শাহজাহান খান shajahanমনির হোসেন মিন্টু, সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে শ্রমিক-কর্মচারী-পেশাজীবী-মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ। আজ সোমবারের এই কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন সংগঠনের আহ্বায়ক নৌপরিহনমন্ত্রী শাজাহান খান। কর্মসূচি শেষ করার আগে তিনি বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়ার ঘুম ভাঙাতে এসেছি।’
হরতাল-অবরোধের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য, পেট্রলবোমা মেরে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করে সমন্বয় পরিষদ। গতকাল রোববার নৌমন্ত্রী এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন।
শাজাহান খানের নেতৃত্বে সংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী আজ দুপুর ১২টার দিকে গুলশান সেন্ট্রাল পার্ক থেকে মিছিল নিয়ে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও করতে রওনা দেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁরা গুলশান ২-এর ৮৬ নম্বর সড়কের মাথায় ৯০ নম্বর সড়কে পৌঁছান। এ সময় তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। সেখানে তাঁরা অবস্থান নেন। ব্যানার-ফেস্টুন হাতে নিয়ে তাঁরা হরতাল-অবরোধবিরোধী স্লোগান দেন।
৮৬ নম্বর সড়কে খালেদা জিয়ার কার্যালয় অবস্থিত। কার্যালয়ের ভেতরে বিএনপির চেয়ারপারসন এক মাসেরও বেশি সময় ধরে অবস্থান করছেন।বেলা সোয়া একটার দিকে কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করেন শাজাহান খান। এর আগে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়ার ঘুম ভাঙাতে এসেছি। আপনি (খালেদা জিয়া) হরতাল-অবরোধের নামে মানুষ খুন করে চলছেন। বোমাবাজি করছেন। চোরাগোপ্তা হামলা করে সাধারণ মানুষ, শ্রমিক হত্যা করছেন। অবরোধ-হরতালে খুন বন্ধ করুন।’

বিএনপির চেয়ারপারসনকে ‘দানব’ অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি নৌমন্ত্রী দাবি জানান, ‘অবিলম্বে এই দানবকে বন্দী করতে হবে।’

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, কর্মসূচি পালনের উদ্দেশে আজ সকাল থেকে গুলশান সেন্ট্রাল পার্কে জমায়েত হতে থাকেন সমন্বয় পরিষদের নেতা-কর্মীরা। বাসে করে ঢাকা ও ঢাকার অাশপাশের এলাকা থেকে তাঁরা সেখানে আসতে থাকেন। এ কর্মসূচির কারণে গুলশান ও বনানী এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। সেন্ট্রাল পার্কে উপস্থিত হন শাজাহান খান, ১৪ দলের নেত্রী শিরিন আক্তারসহ অন্য নেতারা। একপর্যায়ে সেখানে বক্তব্য দেন নৌমন্ত্রী। গুলশান থেকে খালেদা জিয়ার কার্যালয় সরিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে শাজাহান খান বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা না হলে জনগণই তাঁকে গ্রেপ্তার করে কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যাবে।’ ঘেরাও কর্মসূচি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা জানান দিচ্ছি। পুলিশ ভাইয়েরা আমাদের যত দূর পর্যন্ত যেতে দেবে, তত দূর পর্যন্ত যাব। কেউ যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না করে। আমাদের কর্মসূচি চলবে। আমরা যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে যাব। তবে আমাদের কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ।’

খালেদার কার্যালয় ঘেরাওয়ে গুলশানে সমন্বয় পরিষদ

সেন্ট্রাল পার্কে শাজাহান খান তাঁর বক্তব্যে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ট্রাক মিছিল এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি মতিঝিল থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত জাতীয় পতাকা হাতে মিছিল করবে সমন্বয় পরিষদ।

দুপুর ১২টার দিকে গুলশান সেন্ট্রাল পার্ক থেকে মিছিল নিয়ে খালেদা জিয়ার কার্যালয় অভিমুখে রওনা হন সমন্বয় পরিষদের নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি খালেদা জিয়ার কার্যালয় অভিমুখে যাওয়ার সময় দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে গুলশান ২ নম্বর মোড়ের পাশে মেট্রোপলিটন শপিং প্লাজার সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। মিছিলে থাকা এক ব্যক্তির পায়ের ওপর এসে ককটেলটি পড়ে। এ ঘটনায় উপস্থিত নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে মেট্রোপলিটন শপিং প্লাজায় ভাঙচুর চালান।

বেলা দেড়টার দিকে গুলশান ২ নম্বর থেকে নতুন বাজারের দিকে যেতে সড়কে আবার দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এতে ওই এলাকায় অবস্থানরত সরকারপন্থী নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

এর আগে আজ বেলা পৌনে ১১টার দিকে আওয়ামী মহিলা লীগের অন্তত ৫০ জন নেতা-কর্মী গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও করতে যান। গুলশান ২-এর ৮৬ নম্বর সড়কের প্রবেশমুখে তাঁদের থামিয়ে দেয় পুলিশ। পুলিশের বাধা পেয়ে আওয়ামী মহিলা লীগের নেতা-কর্মীরা ৮৬ নম্বর সড়কের প্রবেশমুখে অবস্থান নেন। তাঁরা সেখানে মিছিল-স্লোগান দেন। কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন ঢাকা মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের (উত্তর) সভাপতি তসলিমা চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক শাহিদা তারেক দীপ্তি।

সকালে পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) নুরুল আলম বলেন, আজকের ঘোরও কর্মসূচিকে ঘিরে নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ