বাংলাদেশের বুক ভেঙে ফাইনালে পাকিস্তান

স্পোর্টস ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ   নর্দাম্পটন ফিরল না মিরপুরে। ১৯৯৯ সালে নর্দাম্পটনে একবারই পাকিস্তানকে হারানোর স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ। মিরপুরে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৩২৬ করে ১৫ বছর পর আরেকবার পাকিস্তানকে হারানোর ভিত পেয়ে গিয়েছিল মুশফিকুর রহিমের দল। তবে রানের পাহাড়ে চাপা না পড়ে ইতিহাস গড়েই ৩ উইকেটে জিতল পাকিস্তান। এতদিন ভারতের বিপক্ষে ৩২২ রান তাড়া করে জেতাটাই ছিল তাদের সর্বোচ্চ রেকর্ড। বাংলাদেশের ৩২৬ রানের পাহাড়  তারা ৭ উইকেট হারিয়ে পেরিয়ে যায় ১ বল বাকি থাকতে। এই জয়ে বাংলাদেশের বুক ভেঙ্গে এশিয়া কাপের ফাইনালে পৌঁছল মিসবাহ’র দলই। ৮ মার্চের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলবে পাকিস্তানই। তাই বাংলাদেশের সাথে বুক ভাঙ্গল ভারতেরও।

শেষ ওভারে জয়ের জন্য ৩ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের হাতে ৪ উইকেট। প্রথম চার বলে মাত্র ১ রান দিয়ে ম্যাচে কিছুটা উত্তেজনা ফিরিয়েছিলেন আল আমিন। তার চতুর্থ বলে ফাওয়াদ রান আউট হওয়ায় শেষ ২ বলে জয়ের জন্য ২ রান দরকার পড়ে পাকিস্তানের। কিন্তু উমর আকমলের বাউন্ডারিতে ১ বল বাকি থাকতে রুদ্ধশ্বাস ৩ উইকেটের জয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে পাকিস্তান। তবে ম্যাচটা হারলেও সমর্থকদের মন জিতেছে বাংলাদেশে। নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান করেও জিততে না পারলে কপালের দোষ দেয়া ছাড়া আর উপায় কি?

৩২৬ রানের জবাবে আহমেদ শেহজাদের ক্যারিয়ারের পঞ্চম ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে ৩৮তম ওভারেই ২১০ করেছিল পাকিস্তান। সেই শেহজাদকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে  ম্যাচে ফিরিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক। কিন্তু শহীদ আফ্রিদির ১৮ বলের ফিফটিতে ম্যাচে ফিরে পাকিস্তান। তার তান্ডবে ৬ ওভারে পাকিস্তানের লক্ষ্য কমে দাঁড়ায় ৬২ রানে। শেষ ২৪ বলে সেটা কমে আসে ৪১-এ। তখনই কিনা আফ্রিদির ক্যাচ ছাড়েন মুশফিকুর রহিম! এই ক্যাচ ফেলেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভরাডুবির পর এশিয়া কাপের প্রথম দুই ম্যাচে হেরেছিল বাংলাদেশ। তারপরও আফ্রিদির মত ভয়ংকর ব্যাটসম্যানের ক্যাচই কিনা ফেললেন মুশফিক। তবে সাকিবের দূর্দান্ত থ্রোতে ২৫ বলে ২ বাউন্ডারি ৭ ছক্কায় ৫৯ করে রান আউট হন আফ্রিদি। তখন ১৯ বলে পাকিস্তানের দরকার ছিল ৩৩ রান আর শেষ ৩ ওভারে ৩১। পঞ্চম ওয়ানডে ফিফটি করা ফাওয়াদ আলম ক্রিজে থাকায় আশাটা ছিলই পাকিস্তানের। রাজ্জাকের করা ৪৮তম ওভারে দুই ছক্কায় আসে ১৮ রান। দোলনার মত দুলতে থাকা ম্যাচটা বাংলাদেশের হাত ফস্কে বেড়িয়ে যায় তখনই। ফাওয়াদ আহমেদ তার আগের সেরা ৬৪ পেরিয়ে যান এই ম্যাচেই। তিনি রান আউট হন ৭০ বলে ৭৪ করে। উমর আকমল অপরাজিত থাকেন ১০ রানে। মমিনুল ২টি,সাকিব,রাজ্জাক ও মাহমুদুল্লাহ নেন ১টি করে উইকেট।

পাকিস্তানের ৩২২ রানের বেশি তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই ওয়ানডেতে। তাই বাংলাদেশকে হারাতে হলে ইতিহাস গড়তে হবে পাকিস্তানকেও। সেই লক্ষ্যে তারাও শুরুটা করেছিল দূর্দান্ত। মোহাম্মদ হাফিজ ও আহমেদ শেহজাদ উদ্বোধনী জুটিতে যোগ করেন ৯৭ রান। গলার কাঁটা হয়ে ওঠা জুটিটা ভেঙ্গেছেন মমিনুল। তার বল তুলে মারতে গিয়ে লংঅনে ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ তুলে দেন হাফিজ। তিনি করেছেন ৫৫ বলে ৮ বাউন্ডারিতে ৫২ রান। এরপরই পথ হারায় পাকিস্তান। ৪ রান করা মিসবাহকে বোল্ড করেন সাকিব। হাফিজকে ফেরানো মমিনুল আঘাত হানেন আবারও। শোয়েব মাকসুদকে (২) উইকেটের পেছনে এনামুল হকের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান মমিনুল। ৮ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে পাকিস্তান। সেই চাপটা কাটে শেহজাদ ও ফাওয়াদ আলমের চতুর্থ উইকেটের জুটিতে। তাদের ৯৬ রানের জুটিটা শেহজাদকে (১০৩) বোল্ড করে ভাঙ্গেন রাজ্জাক।

এর আগে ব্যাট করতে নেমে টানা ব্যর্থতার হতাশা  ঝেড়ে ফেলে পাকিস্তানের বিপক্ষে এশিয়া কাপের বাঁচামরার ম্যাচটিতে নতুন ইতিহাসই গড়েছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে  এনামুল হক বিজয়ের সেঞ্চুরিতে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৩২৬ রান করে বাংলাদেশ। এর আগে ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৮ উইকেটে ৩২০-ই ছিল বাংলাদেশের সেরা।

ইমরুল কায়েস ও এনামুল হক গড়েছিলেন ১৫০ রানের জুটি। উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান অবশ্য ১৭০। ৫৯ করা ইমরুলকে উইকেটের পেছনে উমর আকমলের ক্যাচ বানিয়ে জুটিটা ভাঙ্গেন মোহাম্মদ তালহা। এনামুল ফিরেন তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পরপরই। ১৩২ বলে ৬ বাউন্ডারি ৪ ছক্কায় ১০০ করে সাঈদ আজমলের বলে শেহজাদকে ক্যাচ দেন তিনি। ততক্ষণে বাংলাদেশের স্কোর ৩৯.১ ওভারে ২০৪। এরপর বোলারদের উপর ঝড় বইয়ে দিয়ে বাংলাদেশ স্কোরটা নিয়ে যায় ৩ উইকেটে ৩২৬-এ। ৪৭ বলে ৬ বাউন্ডারিতে ৫১ করে ফিরেন মমিনুল।

তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা সাকিব ছিলেন খুনে মেজাজে। ১৬ বলে ৬ বাউন্ডারি ২ ছক্কায় ৪৪ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। মুশফিকুর রহিম অপরাজিত থাকেন ৩৩ বলে ৫১ রানে।ইমরুল ক্যারিয়ারের ১০ম,মমিনুল ৩য় আর মুশফিক করেন ১৪তম ওয়ানডে ফিফটি। সাঈদ আজমল ২টি আর মোহাম্মদ তালহা নেন ১ উইকেট। ম্যাচটিতে বোনাস পয়েন্টের জন্য  পাকিস্তানকে থামাতে হতো ২৬০ রানের নীচে। আফ্রিদি ঝড়ে হয়নি সেটা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Facebook
ব্রেকিং নিউজ